কালিয়াগঞ্জঃ শিশুকন্যা তার মায়ের কাছে চকোলেটের বায়না করেছিল। গৃহবধূর কাছে চকোলেট কেনার মতো টাকা ছিল না। মেয়ের আবদার মেটাতে গিয়ে স্বামীর পকেট থেকে না বলে মাত্র ১০ টাকা নিয়েছিলেন তিনি। এটাই ছিল মহিলার অপরাধ। আর তার ফল ভোগ করতে হল মহিলাকে। বাড়ি ফিরে মহিলার স্বামী দেখেন তার পকেটে ১০ টাকা কম রয়েছে। আর এরপরই স্ত্রীর ওপর চলে অমানুষিক অত্যাচার। বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ স্বামী। লাথি মারলেন স্ত্রীর তলপেটে। গুরুতর জখম অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকলেও স্বামী চিকিৎসার পর্যন্ত ব্যবস্থা করেননি। এমনই এক মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল কালিয়াগঞ্জ ব্লকের পশ্চিম কুনোর গ্রাম। রবিবার নির্যাতিতা মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে দ্বারস্থ হলেন কালিয়াগঞ্জ থানায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও এখনও পর্যন্ত অধরা অভিযুক্ত।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। অভিযুক্ত দোর্দণ্ডপ্রতাপ স্বামীর নাম মুকেশ আলী। মুকেশের বাবা ইব্রাহিম আলী এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। গুরুতর জখম অবস্থায় নির্যাতিতা বধূ সায়েস্তা বানু আশ্রয় নিয়েছেন বাপের বাড়িতে। তাঁঁর ডান হাত, ডান পা, কোমড়ের হাড় ভেঙেছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, বছর পাচেক আগে সামাজিকভাবেই বিয়ে হয় মুকেশ আলীর সঙ্গে সায়েস্তাবানুর। পরবর্তীতে দুটি সন্তানের জন্ম দেন সায়েস্তাবানু। মহিলার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেন স্বামী মুকেশ সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পাশাপাশি চলত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সায়েস্তাবানুর দাবি, তাঁর স্বামীর একাধিক মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সাংকেতিক নামে মোবাইলে সে সমস্ত মহিলাদের নাম সেভ রয়েছে। কাজকর্ম কিছু না করে রাতদিন ওই মহিলাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলত। প্রতিবাদ করলেই চলত মারধর।
এদিনের ঘটনায় সায়েস্তাবানু কালিয়াগঞ্জ থানায় প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন স্বামী মুকেশ আলী, শ্বশুর ইব্রাহিম আলী ও শাশুড়ি আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। যদিও এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি। বধূ নির্যাতনের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষা লতা সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘ওনাদের পারিবারিক কি সমস্যা রয়েছে তা আমি জানিনা। কিন্তু, এই নির্মমভাবে একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে মেরেছে এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। অভিযুক্তদের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি পুলিশের কাছে। পুলিশকে বলব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহনের। কে তৃণমূল, সেটা বড় কথা নয়। অপরাধের কোন রাজনৈতিক রঙ হয় না। তাই অপরাধীও কোন রাজনৈতিক রঙের ছত্রছায়ায় থাকলেও তার ছাড় হবে না।’