নাগরাকাটা: তিনি নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ আদায় করেন। রোজা রাখেন পুরো এক মাস। পবিত্র ইদে শামিল হন নিজের ধর্ম মেনে। আবার কালীপুজোতে শুধু অংশই নেন না। মায়ের আরাধনার যাবতীয় দায় দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধেই। এমনটা চলছে দু-এক বছর ধরে নয়। ওই সময়কালের বয়স এখন ৩৬। টানা ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ১৫ মাস আগে খোলা রেডব্যাংক চা বাগানের ডিরেক্টরস বাংলোর পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মহম্মদ দুলালের মধ্যেই যেন ফুটে উঠেছে ভারত আত্মার প্রকৃত স্বরূপ। কাজী নজরুলের কালজয়ী পদ্যের সেই অমর পংক্তি ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু’-মুসলমানের সার্থকতাও যেন প্রাণ পায় তাঁর মাধ্যমেই।
মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডব্যাংকে আসেন দুলাল। আসল বাড়ি ময়নাগুড়ির রাজারহাটের পুঁটিমারিতে। সেইসময় বাগান খোলা ছিল। ঘোড়াশালে ঘোড়া, পিলখানায় হাতি, বিদেশি অষ্টিন গাড়ি সমৃদ্ধ বৈভবের আলোয় ঝলমল করত রেড ব্যাংকের আনাচে কানাচে। তৎকালীন মালিকের এক কাছের ব্যক্তির মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের দুলালের ওই বাগানে আসা। বয়স একেবারেই কম হওয়ায় তাঁকে ডিরেক্টরস বাংলোতেই রেখে দেওয়া হয়। সেখানেই তৎকালীন মালিকের আশ্রয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা। সঙ্গে বাংলোর দেখভাল। যা আজও করে চলেছেন সমানতালে।
ঠিক কবে থেকে যে ডিরেক্টরস বাংলোর ঠাকুর ঘরের দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই এসে পড়েছে তা এখন আর মনে পড়ে না মধ্য চল্লিশের দুলালের। বাগান যখন খোলা ছিল তখন দৈনন্দিন পুজোর সহকারী হিসেবে কাজ করেছে সে। চা বাগান বন্ধ থাকার পর্বে মহাশক্তির আরাধনা হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। নিজের পোষা গোরুর দুধ বেঁচে পুজোর খরচ যোগাড় করেছে তখন। ফি বছরের দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা নিশিতে দেবীর আসল পুজোর দিন দুলালের দায়িত্ব আরও বড়। গত বছরের ১০ অগাস্ট বাগান খোলার পর মালিক সুশীল কুমার পলের উদ্যোগে আয়োজন হলেও মায়ের ভোগ নিজের হাতেই রান্না করছেন তিনি। এবারও এর কোনও অন্যথা হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই ঠাকুরঘরের দেবী মূর্তিকে বৃহস্পতিবার নতুন শাড়ি পরিয়ে দিয়েছেন। শুক্রবার দেবীকে স্নান করাবেন। এসবে অবশ্য আলাদা করে কোনও তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন না নম্র ও ভদ্র স্বভাবের দুলাল। তাঁর কথায়, ‘আমি ইদের নমাজ আদায় করি। রোজা রাখি। মায়ের আরাধনা সহ বাংলোর কূলদেবতা গোপালের নিত্য পুজোও করি। সর্বশক্তিমানের অস্তিত্ব সবেতেই।‘
রেডব্যাংকের কর্ণধার সুশীল কুমার পালের কথায়, ‘দুলালের মতো মানুষেরা আছে দেখেই পৃথিবীটা আজও সুন্দর। বাংলোর নিত্য পুজোর দায়িত্ব সেই সামলাচ্ছে। একাজে আমাদের পক্ষ থেকে তাঁকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হয়।‘