শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : হাওলার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা গিয়েছে রাজ্যের বাইরে ও কলকাতায়। শিলিগুড়ির বিধাননগরের হোটেলে বসে দিনের পর দিন চলেছে কয়লা মাফিয়াদের কালো কারবার। এমনকি নীলবাতি লাগানো গাড়িতে করে পাচার হয়েছে টাকা। উত্তরবঙ্গের কয়লা পাচার নিয়ে নতুন চ্যাপ্টার খুলল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
বিশেষ দল তৈরি করে নতুনভাবে কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে ইডি। তাতে দুজন স্পেশাল ডিরেক্টর ও দুজন জয়েন্ট ডিরেক্টর আছেন। তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে নোটিশ পাঠিয়ে জেরা করার জন্য দিল্লিতে তলবও করা হয়েছে। সেই তদন্তের সূত্রেই উঠে এসেছে উত্তরবঙ্গের নাম।
কয়লা কারবারের অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে নিয়ে ইডির তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই উঠে আসছে লালার একের পর এক উত্তরবঙ্গ যোগ। এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের একাধিক পুলিশ আধিকারিক, তিন ব্যবসায়ী, কয়েকজন নেতা ও চারজন লিংকম্যানের নাম ইডির ডায়ারিতে নতুন করে নথিভুক্ত হয়েছে। তালিকা আরও বাড়বে বলেই ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে কয়লা পাচারে আগে যে সব নাম উঠেছিল এঁরা তাঁরা নন। এঁদের সম্পর্কে এতদিন অন্ধকারেই ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এবার লালার সৌজন্য ধীরে ধীরে পর্দা উঠতে শুরু করেছে।
ইডির তদন্তে নতুন করে যাঁদের নাম উঠে এসেছে তাঁদের মধ্যে উপরের দিকে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের একটি থানার আইসি। উত্তরবঙ্গে কয়লা পাচারের অন্যতম কিংপিন বলা হচ্ছে ওই পুলিশকর্তাকে। অসম সীমান্ত পার করার পর কয়লার ট্রাকের রুট রেইকির দায়িত্বও পালন করতেন তিনি। কিছুদিন আগে অন্য বিভাগে বদলি হওয়া এক পুলিশ সুপারও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রাডারে রয়েছেন। আলিপুরদুয়ার থেকে বদলি হওয়া এক পুলিশ আধিকারিক ও বর্তমানে জেলায় কর্মরত এক পুলিশকর্তার নামও তালিকায় আছে। এঁদের প্রত্যেকেরই বেনামী সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি।
বীরপাড়া ও লাগোয়া এলাকার দুই অবাঙালি ব্যবসায়ী ভাইয়ের নামও জড়িয়েছে কয়লা পাচারের হাওলা কারবারে। হাওলার কারবার করতে করতে ওই দুই ভাইয়ের যোগাযোগ এতটাই মজবুত হয়ে গিয়েছে যে, মূল কারবারির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে একাংশের কারবার সামলাচ্ছিলেন তাঁরা। শিলিগুড়ির দুই অবাঙালি ব্যবসায়ীর নামও উঠেছে হাওলার কারবারে। তাঁদের মধ্যে একজন রাজ্যের শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। অন্য ব্যবসায়ী কয়লার পাশাপাশি রেশনের চাল, গম, আটা কেনাবেচার অবৈধ কারবারের সঙ্গেও জড়িত। হাওলার কারবারের অন্যতম ঘাঁটি ছিল বিধাননগরের একটি হোটেল। শাসকদলের স্থানীয় এক নেতার সহযোগিতায় সেই হোটেলে বসেই কালো কারবারের পরিকল্পনা, হাওলার টাকা লেনদেন ও বখরার হিসেব হত বলে ইডি খবর পেয়েছে।
উত্তরের কয়লা কারবারে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ এলাকার জনৈক ঘোষবাবুর নাম ইডির ডায়ারিতে লেখা হয়েছে। ঘোষবাবু কলকাতার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন। ময়নাগুড়ি থেকে চোপড়া পর্যন্ত কারবার দেখভাল করতেন তিনিই। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি তত্পরতা বাড়ানোয় আপাতত নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন ঘোষ। ইডি সূত্রের খবর, বর্তমানে পেট্রোলের কারবারে নাম লিখিয়েছেন ওই ব্যক্তি। ময়নাগুড়ির ইন্দিরা মোড় এলাকা ছিল ঘোষের মূল ডেরা। সূত্রের খবর, ঘোষবাবুকে হেপাজতে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
রাজ্যব্যাপী কয়লা পাচারের যে সিন্ডিকেট রয়েছে, অভিযুক্তরা তারই অংশ। এখন পরিমাণ কমলেও ২০১৩ থেকে ২০২২-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত অসম সহ উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বেআইনি কয়লা ঢুকত বাংলায়। চোরাপথে আসা সেই কয়লার খানিকটা নামত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আর বেশিরভাগটাই চলে যেত ভিনরাজ্যে। বেআইনি ওই কারবার চালানোর জন্য রাজ্যের সীমানায় ঢুকলেই ট্রাক পিছু ২০-২৫ হাজার টাকা তোলা আদায় করত কারবারিরা। অসম সীমান্ত ছাড়াও উত্তরবঙ্গের আরও চারটি পয়েন্টে টাকা দিতে হত কয়লা কারবারিদের।
সেই টাকা ভাগাভাগি হয়ে যেত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। ইডির তদন্ত বলছে, ট্রাক থেকে টাকা তুলত পুলিশ। মূল কারবারির এজেন্ট সব হিসেব রাখত। এক জায়গাতেই যাতে টাকা জমা পড়ে তার জন্য কয়লার ট্রাকে টোকেন সিস্টেম চালু করেছিল কারবারিরা। চার পয়েন্টের টাকা একবারে অসম সীমান্তে জমা দিয়ে টোকেন নিলে সেই টোকেন দেখালেই অন্য পয়েন্টে ছেড়ে দেওয়া হত গাড়ি। পুলিশ ও এজেন্টরা শতাংশের হারে নিজেদের কমিশন কেটে রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দিত মূল কারবারিদের কাছে। টাকা লেনদেনের কাজেই কারবারে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন ব্যবসায়ী। কয়লার কালো টাকা এধার ওধার করে রাতারাতি তাঁরাও হয়ে ওঠেন কোটিপতি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বলছেন নানা চাপে ভাটা পড়লেও উত্তরবঙ্গ দিয়ে কয়লা পাচারের কারবার এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। (চলবে)
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাযের বক্তব্যের একটি ভিডিও বিকৃত করার অভিযোগে অল…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গ্রীষ্মকাল মানেই আমের মরশুম। তাই শুধু শুধু আম না খেয়ে, পাকা…
কিশনগঞ্জ: এক দম্পতির রহস্যমৃত্যু (Death Case) ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল বিহারের (Bihar) পূর্ণিয়ায় (Purnia)। স্ত্রীকে শ্বাসরোধ…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারত সহ আরও কিছু দেশকে ‘জেনোফোবিক’…
আসানসোল: অভিযান চালিয়ে একটি হোটেল থেকে বিরল প্রজাতির একটি তক্ষক (Tokay Gecko) উদ্ধার করল আসানসোল…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: প্রজ্জ্বল রেভান্নার (Prajwal Revanna) পর এবার পুলিশের নজরে বাবাও। শনিবার গ্রেপ্তার…
This website uses cookies.