নাগরাকাটা: প্রতি পদে হাতির হামলার আশঙ্কা। ঢুকে পড়ে গন্ডার, বনশূকর এমনকি চিতাবাঘও। বুনোদের আতঙ্কে নাগরাকাটার বামনডাঙ্গার মডেল ভিলেজের অর্ধেক বাসিন্দাই সেখানে আর থাকেন না। পরিবর্তে ‘সেফ জোন’ হিসেবে যার যেখানে নিজেদের শ্রমিক আবাস সেখানেই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। বছর দশেক আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বামনডাঙ্গায় ওই মডেল ভিলেজটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মোট বাড়ির সংখ্যা ৫৭১। বাড়ি প্রাপকদের জমির পাট্টাও দেওয়া হয়। ব্যবস্থা করা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে পানীয় জল সহ রাস্তাঘাটেরও। হাতির হামলার কথা চিন্তা করে দু’প্রান্তে দুটি ওয়াচটাওয়ারও তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ঐরাবত বাহিনীর অত্যাচার থামেনি। মাঝে মাঝে সেখানে কখনও হাতির দল, আবার কখনও দলছুট হাতি ঢুকে পড়ে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি হাতির হামলায় ভেঙে গিয়েছে। কোনওটাই মেরামত হয়নি।
সানি ওরাওঁ নামে মডেল ভিলেজের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সন্ধে ঘনালেই হাতির ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি। যাঁরা বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই তো সেখানে থাকেন না। বাগানের শ্রমিক মহল্লাগুলিতেই থাকা নিরাপদ বলে মনে করেন সকলে।’ যমুনা মানকিমুন্ডা নামে এক মহিলা বলেন, ‘ধরে নিন সবমিলিয়ে ২০০ ঘরে লোক থাকে। বাকি সব খালি পড়ে আছে।’ বিনোদ কুজুর নামে আরেক বাসিন্দার কথায়, ‘শুধু কি হাতি! চিতাবাঘ, বনশূকর, গন্ডার সমস্ত কিছুই এখানে ঢুকে পড়ে। ফলে প্রাণ হাতে করেই থাকতে হয়।’
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, যে স্থানে মডেল ভিলেজটি তৈরি করা হয়েছে, তার ঠিক পেছনে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গরুমারার জঙ্গল। পূর্বে রয়েছে ডায়নার জঙ্গলও। মূলত গরুমারা থেকে চলে আসা হাতি ও অন্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণস্থল ওই এলাকাটি। একের পর এক বাড়ি হাতির হামলার শিকার হয়ে বর্তমানে ভগ্নদশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
বামনডাঙ্গার ফাঁকা যে জমিতে মডেল ভিলেজটি তৈরি করা হয়েছিল সেখান থেকে ডায়না লাইন ও ১৮ নম্বর লাইনের মতো শ্রমিক মহল্লাগুলির দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই যাঁরা মডেল ভিলেজে ঘর পেয়েছিলেন, তাঁরা প্রথমে সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে এলেও পরে আতঙ্কে নিজেদের আসল ডেরাতেই ফিরে যান। বাকিদের কাছে বিকল্প না থাকায় সেখানেই রয়ে গিয়েছেন। এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য লক্ষ্মণ কাওয়ার বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে মডেল ভিলেজটি তৈরি করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি বলেই মনে করছি।’