তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: গতবছর কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)-র হাত ধরে বিদেশের মাটিতে পরিচিতি পেয়েছিল পাহাড়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি ঝাড়ু (Mountain broom)। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতেই এখন পাহাড়ের ঝাড়ুর বিক্রি বেড়েছে চারগুণ। মাসে প্রায় ৪০ হাজার ঝাড়ু পাড়ি দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। শীঘ্রই বিশ্ব বাংলা স্টোর থেকেও ক্রেতারা এই ঝাড়ু কিনতে পাবেন। বিক্রি বাড়ায় লাভের মুখ দেখছেন পাহাড়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।
আন্তর্জাতিক ব্যবসাসী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুবাদে এখন দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা সহ দেশের বড় বড় শহরের বিভিন্ন স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এই পাহাড়ি ঝাডু। চিরাচরিত নয় বরং নতুন পদ্ধতিতে এই ঝাড়ু তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের থাইসানোলেনা ল্যাটিফলিয়া নামের একটি গাছ থেকে এই ঝাড়ু তৈরি হয়। গাছটির প্রচলিত নাম ‘ঝাড়ু গাছ’।
নতুন পদ্ধতিতে তৈরি করা এই ঝাড়ু যাতে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে পারে, সেজন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আপাতত রিলায়েন্স ও স্পেনসর্স-এ এই ঝাড়ু পাওয়া যাচ্ছে। সিটং, মিরিকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা এই ঝাড়ু তৈরি করছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রকল্প আধিকারিক অনীল থাপা বলছেন, ‘এই ঝাডুগুলো ঘর ঝাড় দেওয়ার পাশাপাশি ফ্যান পরিষ্কার, ঘরের সিলিং পরিষ্কার করা যাবে। এই ঝাড়ু তৈরির জন্য যে কাঁচামালের প্রয়োজন, তা পাহাড়েই পাওয়া যায়। তাই অর্ডার বেশি হয়ে গেলেও ডেলিভারি দিতে কোনও সমস্যা হয় না।’
শিলিগুড়ি (Siliguri) সেবক রোডের মলে ভালো চাহিদা রয়েছে এই পাহাড়ি ঝাড়ুর। এমনটাই জানাচ্ছে স্টোর কর্তৃপক্ষ। কীভাবে এই ঝাড়ু তৈরি হয়? সিটংয়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সদস্য রূপা তামাং বলছেন, ‘গাছ কেটে আনার পর ড্রাইং মেশিনে তা শুকোনো হয়। তারপর সেটাকে কাটিং করে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। ঝাড়ু যাতে খুলে না যায়, সেজন্য পোক্তভাবে সেলাই করা হয়।’
আরেক সদস্য ঋধিমা শেরপার কথায়, ‘প্রথমদিকে আমরা অল্প সংখ্যক ঝাড়ু তৈরি করতাম। এখন চাহিদা বেশি থাকায় প্রোডাকশন বাড়াতে হয়েছে।’ এর ফলে এখন পাহাড়ের অনেক মেয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পেরেছে বলে জানান তিনি।
চিরাচরিত ঝাড়ুগুলির হাতল ছোট, ফলে অনেকটা ঝুঁকে ঝাড় দিতে হয়। অনেকের কোমরে ব্যথা হয়ে যায়। সেজন্য নতুন এই ঝাড়ুতে করা হয়েছে লম্বা হাতল। এছাড়াও একেকটি ঝাড়ু এক বছরের বেশি ব্যবহারযোগ্য। আগামীদিনে ক্রেতাদের কাছে পাহাড়ি ঝাড়ুর কদর আরও বাড়বে বলে আশাবাদী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।