ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: বাড়তি আয়ের জন্য নিজের দোকানের সামনে রাস্তার অংশ ভাড়া দিতে শুরু করেছিলেন হংকং মার্কেট, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ও বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ভাষায় যা পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘ডালা’ নামে। একটা একটা থেকে শুরু করে এখন কয়েকশো ডালা গড়ে উঠেছে পাশাপাশি থাকা তিন মার্কেটে। রাস্তা দখল করে গজিয়ে ওঠা ডালা সরাতে এবার হুঁশিয়ারি দিলেন শিলিগুড়ির (Siliguri) মেয়র গৌতম দেব (Goutam Deb)।
মেয়র বলছেন, ‘৪ জুনের পর দখলদারির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এর মধ্যেই যাতে ওই দখলদাররা দোকান সরিয়ে নেয়, সেই জন্য পুরনিগমের তরফে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি দোকান না সরান তবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মেয়রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাপি সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা মানুষের কাছে হাত জোর করেও অনুরোধ করেছি, যাতে রাস্তা দখল করে কেউ ব্যবসা না করেন। অধিকাংশ দোকানদার তাঁর দোকানের সামনে ডালা ভাড়া দিয়ে প্রচুর টাকা আয় করছেন। এগুলো কখনোই বরদাস্ত করা যায় না। আমরা বহুবার বিষয়টি পুরনিগমকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’
ব্যক্তিমালিকানার দাবিতে মাস কয়েক আগে উত্তাল হয়েছিল বিধান মার্কেট। পথে নেমে আন্দোলনও করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেই আন্দোলনে শামিল করা হয়েছিল ডালা ব্যবসায়ীদেরও। তখন বাপিই দাবি করেছিলেন, এসজেডিএ ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিমালিকানা দিলে ডালা ব্যবসায়ীদের জন্যও ‘কিছু একটা’ ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই বাপিই এখন ডালা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে থাকায় প্রশ্ন উঠেছে মার্কেটে।
পসরা উঠে এসেছে রাস্তায়। বাইক, সাইকেল তো দূর, এখন হেঁটে যাতায়াত করাই দুর্বিষহ। এমনকি বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকারও পরিস্থিতি নেই কয়েকটি গলিতে।
পাশপাশি থাকা তিন মার্কেটে রাস্তার ধারে যত দোকান রয়েছে, তার প্রতিটির সামনেই এক বা একাধিক ডালা বসানো হচ্ছে রোজ। বিনিময়ে দোকান মালিক দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। কিন্তু রাস্তা দখল করে ডালা বসানোর ফলে চলাচলের পথ থাকছে না। ফলে নিত্য যানজট তৈরি হচ্ছে। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও। বিষয়টি বহুবার পুরনিগমকে জানানো হলেও বেআইনি দোকানপাট সরানোর সাহস দেখাতে পারেননি কেউ।
মেয়র এদিন শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেন, ‘এই মার্কেটে সবক’টি রাস্তা দখল হয়ে গিয়েছে। তাই দখলদারদের রাস্তা থেকে সরে যেতে হবে। এভাবে চলতে পারে না। এইসব বাজারে কেউ ঢুকতে পারেন না, এত জ্যাম থাকে। আমরা ৪ তারিখের পর সব পরিষ্কার করে দেব। হংকং মার্কেটের সামনের রাস্তারও এক অবস্থা।’
শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খোকন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে সত্যিই মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হয়। তবে এর জন্য আমাদের মতো ব্যবসায়ীরাই দায়ী। আমরা এর আগে প্রশাসনিক মহলে বহুবার জানিয়েছিলাম। মেয়র যদি এবার উদ্যোগ নিয়ে এই কাজ করতে পারেন তবে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।’