সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: সদ্যসমাপ্ত প্রথম পর্বের ভোটে (Lok Sabha Election 2024) উত্তরের তিন আসনে জয়ের দাবিতে সরব তৃণমূল, বিজেপি দুই শিবিরই। রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই জয়-পরাজয় নিয়ে যুক্তি-তক্কে ঝড় তুলছেন৷ সেসবের আড়ালে ভোটের ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত পোড়খাওয়া ভোট ম্যানেজাররা। সেই সুবাদেই উত্তরের তিন আসনে নগেন রায়ের (অনন্ত মহারাজ) (Nagen Roy) অনুগামীদের ভূমিকা নিয়ে চলছে খোঁজখবর। এর মূল কারণ, অতীতে দেখা গিয়েছে নগেনের অনুগামীরা তাঁর নির্দেশের বাইরে এক চুলও নড়েন না৷ সদ্যসমাপ্ত ভোটে নগেনের সমর্থনের গোপন নির্দেশ কোনদিকে ছিল তা জানতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না রাজনৈতিক মহল।
তবে নগেনের সমর্থন নিয়ে জল্পনা বাড়িয়েছে ভোটের মুখে গ্রামগঞ্জে গোপনে ছড়িয়ে পড়া নগেন রায়ের স্বাক্ষরিত এক চিঠি। যদিও সেই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। হাতে আসা সেই চিঠির ওপরে অনন্তর ধর্মীয় স্লোগান যেমন লেখা আছে তেমনি রয়েছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নাম। ভোটের ঠিক আগের দিন ১৮ এপ্রিল লেখা চিঠির মূল অংশে বিজেপির নির্বাচনি ইস্তাহার নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।
বিজেপির ইস্তাহারে প্রকাশিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হলে রাজবংশী সমাজের বিপদ বলে উল্লেখ করা আছে। এরপরেই বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়কে ভোট না দিয়ে সমস্ত রাজবংশী মানুষকে তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়কে জেতানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠির শেষে সকলকে আশীর্বাদ সহ নগেন রায় নাম স্বাক্ষর করা আছে। ওই চিঠি ভোটের আগে গোপনে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়েছে বলেই খবর। সেটা হয়ে থাকলে নগেন অনুগামীরা কী করেছেন তার হদিস পেতে নাজেহাল সকলেই। যদিও খোদ নগেন রায় বলেছেন, ‘এ কাজ শয়তানের। আমি কোনওদিনই এসব করি না। প্রথমত আমি এত ভালো বাংলা লিখতে পারি না কারণ আমার শিক্ষা অসমে। তাছাড়া আমি জিসিপিএ’র প্যাড ব্যবহার করি না তা সবাই জানেন। সর্বোপরি আমি বাংলা ভাষায় কিছু নির্দেশ দিই না। যারা যে উদ্দেশ্যে শয়তানি করে এসব করছে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না।’
নাম না করে এই কাজের পিছনে তৃণমূল রয়েছে বলেই বোঝাতে চেয়েছেন নগেন। তবে এবারের ভোটে যে তিনি খুব সক্রিয়ভাবে বিজেপির পক্ষে নামেননি তা বোঝাতেও কসুর রাখেননি বর্তমানে বিজেপির সাংসদ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে তিনি যে এখনও ক্ষুব্ধ তাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন নগেন৷ এদিন তিনি বলেন, ‘আমি কারও ঠিকা নিই নাই। সবাই নিজের মতামতের ভিত্তিতে ভোট দিয়েছে।’
তিনি যে শেষমুহূর্তে বিজেপির (BJP) পক্ষে নেমেছিলেন তা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, বাড়িতে আগুন লাগার পর জল ঢেলে দিলেও সেখানকার অনেক কিছুই আর ব্যবহার করা যায় না৷ আমি আগেই বলছিলাম আগুন না লাগাতে। কোচবিহারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও সেটাই জানিয়েছি।’
নগেনের বক্তব্যেই স্পষ্ট, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি থেকে এক চুলও সরেননি তিনি। সেকারণেই শুরুতে না হলেও শেষে তিনি বিজেপির পক্ষেই দাঁড়ান বলে খবর।
এদিকে ছড়িয়ে দেওয়া লিফলেটে দলের নাম ব্যবহার নিয়ে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নগেন অনুগামী নমিতা বর্মন বলেন, ‘ওই লিফলেট সর্বৈব মিথ্যে এবং নগেন রায়ের নামে অপপ্রচার। ওটা দলের লিফলেট না এবং সেই সইও নগেন রায়ের নয়৷ এটা একটা নোংরা রাজনৈতিক চক্রান্ত।’