নয়াদিল্লি: ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হতে পারেননি ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে। সেই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল সিপিএমও। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কী তাঁদের এই ব্যতিক্রমী অবস্থান, সেই নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, সম্প্রতি রাজ্যে আসন সমঝোতার নীতিকৌশল থেকে সরে এসেছে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। সংসদের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নেওয়ার জন্য কলকাতা ছেড়ে দিল্লি উড়ে আসার আগের মুহূর্তে সিপিএমের এই অবস্থান নিয়ে বিতর্কিত কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূল ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সংসদে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেদিলেন অভিষেক।
এদিন তিনি ঠারে ঠারে জানিয়ে দিলেন, যদি আসন সমঝোতা হয় তবে কংগ্রেসের সঙ্গে হবে, সিপিএমের সঙ্গে নৈব নৈব চ:। ‘যদি আসন নিয়ে সমঝোতা হয়, তাহলে সেটা কংগ্রেসের সঙ্গেই হবে, বামেদের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা নয়৷ আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড আলোচনা চাইলে নিশ্চয়ই কথা হবে, এ নিয়ে আমার কোনও ছুঁতমার্গ নেই’- জানিয়ে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আসন সমঝোতা প্রসঙ্গে তাঁর এও দাবি, ‘বাংলায় আসন বন্টন নিয়ে কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কোন আলোচনা হলে তো বলব! দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম না৷ সিপিএম কেন ছিল না, সেটা তাদের বিষয়৷ তবে সেই বৈঠকে আসন সমঝোতা নিয়ে কোনও রফা হয়নি, সেটা আমি জানি।’
প্রশ্ন উঠেছে, ‘নিষেধাজ্ঞা’ কি শুধুই সিপিএমের জন্য, নাকি অন্য বামদলগুলির ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য? অভিষেকের দাবি, ‘পশ্চিমবঙ্গে অন্য কোনও দলই প্রাসঙ্গিক নয়। সিপিআই বা ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই-এমএল, আরএসপি’র মতো দলগুলির রাজ্যস্তরে কোনো ভিত্তি নেই। ফলে এ নিয়ে আলোচনা করা বৃথা।’ দলভিত্তিক আসন সমঝোতায়, রাজ্যওয়াড়ি নীতি ভিত্তিক যোগসাজশ প্রসঙ্গেও প্রশ্ন উঠেছে, যদি উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির কিরণময় নন্দ বাংলায় লড়তে চান বা তৃণমূল কংগ্রেসের কোন সাংসদ যদি ভিনরাজ্যে নির্বাচন লড়েন সেক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজি কী হবে? এই মর্মে অভিষেকের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এমন কোনও প্রস্তাব উত্থাপিত হয়নি, সে ক্ষেত্রে তা নিয়ে মন্তব্য করা অযৌক্তিক।’ এদিন সাংবাদিকদের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মুম্বই সামিটের মুহূর্তে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে, তবে সেখানে বাংলা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি, ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে সার্বিক অর্থে। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-র প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সোচ্চার দাবি, ‘আমার দৃঢ় ধারণা বিজেপি লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে নিয়ে আসবে৷ ইতিমধ্যেই সর্বভারতীয় স্তরে পাঁচ দফা বুলেট প্রয়োগ করেছে বিজেপি শিবির, এর মধ্যে চন্দ্রায়ণ, জি-২০, মহিলা সংরক্ষণ বিল, রাম মন্দির আছে৷ নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করতে গেলে বিজেপিকে নির্বাচন এগিয়ে আনতেই হবে৷’ প্রশ্ন উঠেছে, এর বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোটও কী পাল্টা তোপ দাগবে? এহেন প্রশ্নের উত্তরে অভিষেকের দাবি-‘বিজেপি সারপ্রাইজ দিতে পারলে আমরাও পারব। ধৈর্য ধরুন, ঠিক সময়ে জানতে পারবেন।’ এই প্রসঙ্গে ২০২৪-র ভোটের আগে বিজেপি থেকে দলবদলু নেতাদের তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে যাবতীয় প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০২১ সালে বিজেপি যে ভুল করেছে, তা তৃণমূল করবে না৷ বিজেপির অনেকেই যোগদানের লাইনে আছে, নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে৷ কাউকে ফেরত নেওয়া হবে না। এমন কোনও কাজ করা হবে না যাতে দলের বিশ্বস্ত কর্মীদের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে৷’