নাগরাকাটা: পুজোর সময়ও ছিল শ্মশানের নীরবতা। দীপাবলি কেটেছে অন্ধকারে। তবে সমস্ত হতাশাকে দূরে সরিয়ে ফের নতুন উদ্যোমে পথ চলা শুরু করল নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা-টন্ডু ও মেটেলির সামসিং চা বাগান। পুজোর আগে বন্ধ হওয়া ওই দুই বাগান নয়া পরিচালকদের হাত ধরে বুধবার থেকে খুলল। প্রত্যন্ত বামনডাঙ্গা-টন্ডুতে এদিন ছিল কার্যত অকাল হোলি। এদিনের কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন মন্ত্রী বুলু চিকবরাইক। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই রয়েছে একটাও বাগান বন্ধ রাখা যাবে না। এবারে অন্য যে কয়েকটি বাগান বন্ধ রয়েছে সেগুলিও খোলার তৎপরতা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে আলোচনার মধ্যে রয়েছে কালচিনি ও রায়মাটাং।’ যে নয়া মালিকের মাধ্যমে দুটি বাগানই এদিন একলপ্তে খুলেছে সেই ঋত্বিক ভট্টাচার্য এদিন বামনডাঙ্গার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিকদের উচ্ছ্বাস দেখে দৃশ্যতই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তিনিও। বলেন, ‘সবার মিলিত প্রচেষ্টাতেই যে দুটি বাগান ভালমতো চালাতে পারব সেই দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে।’
এর আগে বামনডাঙ্গা-টন্ডুতে ঝাঁপ পড়ে ৪ অক্টোবর গভীর রাতে। সেখানকার প্রায় ১,২০০ শ্রমিকের পুজোর বোনাস মেলেনি। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় সামসিংয়েও। ১৬ অক্টোবর ওই বাগানটিতে লকআউটের নোটিশ জারি হয়। সেখানে স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ১,৮০০। সব মিলিয়ে ৩ হাজার শ্রমিক নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেলেন। শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া ৯ শতাংশ হারের বোনাস নতুন পরিচালকরা মিটিয়ে দেবেন। বকেয়া থাকা মজুরি আগামী দু’মাসের মধ্যে ৪টি সমান কিস্তিতে দেওয়া হবে। স্টাফ-সাব স্টাফদের বকেয়া বেতন মিলবে দু’মাসের মধ্যে। বকেয়া পিএফের বিষয়টি নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পদক্ষেপ করা হবে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে দুই বাগানের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে শ্রম দপ্তরের সঙ্গে একটি পর্যালোচনামূলক বৈঠকে বসা হবে।
এদিন বামনডাঙ্গা চা বাগানে ধামসা-মাদল বাজিয়ে নয়া পরিচালকদের স্বাগত জানান শ্রমিকরা। একে অপরকে আবির মাখিয়ে দিতেও দেখা যায় তাঁদের। তার আগে ফ্যাক্টরি গেটের সামনে শ্রমিকদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাগান খোলার বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে শ্রমিকদের জানান মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘আগের মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাগন্ডা বকেয়া রেখে যেভাবে বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তা শুধু হতাশাজনকই নয়। শ্রমিকদের অন্ধকারের মুখে ফেলে দিয়েছিল।’ শাসকদলের চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও তৃণমূলের মেটেলি ব্লক কমিটির সভাপতি জোশেফ মুন্ডা বলেন, ‘সামসিং চা বাগানের টপ, লোয়ার ও ইয়ংটং এই ৩ ডিভিশনেই এদিন থেকে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। নয়া মালিকের পক্ষ থেকে পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়।’