চাঁচল, ৬ ডিসেম্বর : সরকারের ভুরি ভুরি প্রকল্প, ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি। তা সে কেন্দ্র হোক বা রাজ্য। উভয়েই নিজেদের দাবী করে গরিবের সরকার বলে। বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প নিয়ে চারিদিকে বড় বড় বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। ভোট প্রচারে জমজমাট হয়ে ওঠে সেই সব প্রকল্পের খতিয়ান। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত হতদরিদ্র সকলের কাছে অর্থাৎ যাদের জন্য এইসমস্ত প্রকল্প, তারা সকলেই কি তার সুফল পাচ্ছেন ? সেই প্রশ্নই উঠে আসে চাঁচল মহকুমার আমলাপাড়ার বাসিন্দা যাটোর্ধ এক দম্পতির করুন অবস্থা দেখে।
স্ত্রী বুলো দাসকে নিয়ে চাঁচল মহকুমা আদালতের পেছনদিকে আমলাপাড়ায় বসবাস করেন ৬৫ বছর বয়সী আনিসুর রহমান। বসবাসের একমাত্র আশ্রয় মাটির ঘরটি ভগ্নপ্রায়। একসময়ে দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে দিনযাপন করলেও বয়সের ভারে এখন আর শরীরে কুলোয় না। স্ত্রী বুলো দাসের চোখের অসুখ। চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ছানি অস্ত্রোপচার করিয়েও তেমনভাবে দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি। এখনও চোখে ঝাপসা দেখেন। তাই রান্নার কাজটুকুও তিনি করে উঠতে পারেন না। উন্নত মানের চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। একসময় অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে দুটি গরু কিনেছিলেন তিনি। সেই গরুর দুধ বিক্রি করে একসময় চিকিৎসা সহ জামাকাপড়ের খরচ জোটাতেন। কিন্তু ঠিকমতো খাদ্যের জোগান দিতে না পারায় আর আগের মতো দুধ হয় না। বসবাসের একমাত্র জরাজীর্ণ ঘরটি দিয়ে সন্ধ্যের পর হু হু করে বাতাস ঢোকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না তাদের। বেশ কিছুদিন ধরে দুজনেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন অর্ধাহারে এবং পাড়া প্রতিবেশীদের দয়ায় কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
আনিসুর বাবুর কথায়, একাধিকবার বার্ধক্য ভাতার জন্য ছোটাছুটি করেও কোনো লাভ হয় নি। একটি সরকারি ঘর পাবারও চেষ্টা করেছিলেন। তাও জোটে নি। এই সমস্ত সুযোগ সুবিধে পেতে হলে নাকি টাকা দিতে হয়। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “আর কত গরীব হলে সরকারি সুযোগ সুবিধেগুলি পাওয়া যায়, তা জানা নেই। যাদের পাকা বাড়ি আছে, চোখের সামনে দেখছি তারাও সরকারি ঘর পেয়ে যাচ্ছেন. কিন্তু অনেক ছোটাছুটি করেও আমার ভাগ্যে জুটলো না। শুনেছি বিপিএল তালিকাতেও নাকি আমার নাম নেই। কাজেই রেশনের ১০ কেজি চাল ছাড়া আর কিছুই পাই না।”
আনিসুর বাবুর প্রতিবেশী বাবাই দে বলেন, “পরিবারটি সত্যিই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। আমরা যতটা পারি সহায়তা করি। কিন্তু এতে তো স্থায়ী সমাধান হয় না। সরকারি আধিকারিকদের ওনার বিষয়টি একটু দেখা দরকার।” এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যা মাম্পি রায় বলেন, “পরিবারটি সত্যিই অসহায় অবস্থায় আছে। আমি চেষ্টা করবো, যাতে তাঁরা সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলি পান।” চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের সঞ্চালক প্রণব দাস বলেন, “কিছুদিন পরই ফের দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু হবে। উনি শিবিরে এলে আমরা চেষ্টা করবো ওই দম্পতির বার্ধক্য ভাতা চালু করা সহ অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার। ওনাদের চিকিৎসার বিষয়েও প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।”