রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির এয়ারভিউ মোড় সংলগ্ন মহানন্দা নদী (Mahananda River) থেকে অবাধে বালি তোলা চলছে। পুরুষরা তো বটেই মহিলা এবং শিশুদেরও বালি তোলার (Child labour) কাজে নামানো হচ্ছে। টাকা উপার্জনের নেশায় স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়ে বালি তোলার কাজ করছে ওই শিশুরা। প্রকাশ্যে বালি তোলার কাজ চললেও পুরনিগম কিংবা ভূমি দপ্তর কারও কোনও নজর পড়েনি। ফলে পুরনিগমের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শিশুদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই অবিলম্বে বিষয়টির ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন শহরের শিক্ষানুরাগীরা।
প্রাক্তন শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দীর বক্তব্য, ‘সমগ্র শিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে ওই শিশুদের স্কুলে ফেরাতে পারে প্রশাসন। নয়তো স্কুলের প্যারাটিচারদের কাজ হল শিশুদের ট্র্যাক করা। তাঁদের দিয়েও ওই শিশুদের চিহ্নিত করে স্কুলে ফেরানো যেতে পারে।’ বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ি পুরনিগমের চাইল্ড অ্যান্ড মাদার কেয়ার বিভাগের মেয়র পারিষদ শ্রাবণী দত্তের বক্তব্য, ‘আমার বিষয়টি জানা নেই। আমি মেয়রের সঙ্গে কথা বলব বিষয়টি নিয়ে।’
সমগ্র শিক্ষা মিশনের ডিপিও শ্রেয়সী ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় জানার পরেই এখন কথা বলতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দিয়েছেন। শিলিগুড়ির এয়ারভিউ মোড়ে মহানন্দা নদী থেকে ছোট ছোট আকারে বালি-পাথর তোলা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু মানুষ নদীর মাঝামাঝি এলাকা থেকে বালি-পাথর তুলে নদীর চরে জড়ো করছে। এরপর ভ্যানে করে কিংবা বস্তায় ভরে বিক্রির জন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অল্প করে ভাগে ভাগে বালি তোলায় কেউ নজরও দিচ্ছে না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বালি তুলে পাচার চলছে। সেই কাজে বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও লাগানো হচ্ছে। স্কুল বাদ দিয়ে ছেলেমেয়েরা নদী থেকে বালি তুলছে। কেউ কেউ আবার বাচ্চাদের সপ্তাহে একদিন স্কুলে পাঠিয়ে বাকি সময় বালি তোলার কাজে নামাচ্ছে।
এলাকার এরকমই তিনটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। প্রথম পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী পুরুষ ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি তিন নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তাঁর বক্তব্য, ‘ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনবেলা ভর পেট খাবার জোটে না। এই বালি তোলা হলে বিক্রি করে কিছু টাকার জোগাড় হয়।’ দ্বিতীয় পরিবারের উপার্জনকারী একজন মহিলা। তিনি বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। বাড়িতে অসুস্থ স্বামী ছাড়াও শাশুড়ি, সন্তান রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘কিছু করে তো পেট চালাতে হবে। তাই বাচ্চাকে নিয়ে বালি তুলি।’ তৃতীয় পরিবারের উপার্জনকারী কোভিডের আগে পর্যন্ত ফল বিক্রেতা ছিলেন। কোভিডে ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন ঘুরে যা কাজ পান তাই করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বালি তুলি। বিক্রি করে দুটো পয়সা আয় হয়।’ স্কুলে কেন পাঠান না সেই প্রশ্নের উত্তরে বক্তব্য, ‘প্রতিদিন স্কুলে গেলে আমরা খাব কী।’