বালুরঘাট: শহরের রাস্তায় দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নম্বরহীন টোটো। কিন্তু প্রশাসনের তরফে টোটোদের নির্দিষ্ট মোটর আইন মেনে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের কথা বলা হয়েছিল। যে বার্তা শুনে অনেক টোটোচালক রেজিস্ট্রেশনে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ টোটোই রমরমিয়ে ঘুরছে। যার জেরে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছে টোটোচালকরা। এই বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ জেলা আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক।
টোটোর দাপটে এখন শহরের রাস্তায় চলা দায়। অলিগলি থেকে শুরু করে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত এর দৌরাত্ম্যে নাকাল হতে হচ্ছে শহরবাসীকে। উপরন্তু এই টোটোর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। লাগামহীনভাবে টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চিন্তায় পড়েছে আঞ্চলিক পরিবহন দপ্তর। কিন্তু টোটো আমদানির প্রথম থেকেই বিভিন্ন জটিলতার কারণে বেগ পেতে হচ্ছে দপ্তরকে। এমনকি শোকজ থেকে শুরু করে আদালতে পর্যন্ত যেতে হচ্ছে আধিকারিকদের। প্রথম পর্যায়ে শহরের টোটো চলাচলের জন্য পুরসভা থেকে নম্বর প্লেট দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ২০০টির বেশি টোটোকে নম্বর দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেসব এখন অতীত। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কেউ টোটো কিনে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। যার ফলে টোটোই চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার চাইতে পায়ে হেঁটে যাওয়াতেই স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন অনেকে। যার মধ্যে সিংহভাগ টোটোর বৈধ নম্বর প্লেট নেই। তাদের পরিবহন দপ্তর বা ট্রাফিক কেউই আটকাচ্ছে না। যা দেখে বুকে বল পাচ্ছেন নতুন টোটোচালকরা। তারা তাদের টোটো নিয়ে আর পরিবহন দপ্তরে গিয়ে নম্বর প্লেট লাগাচ্ছেন না। কারণ যেখানে নম্বরহীনভাবে নির্বিঘ্নে রাস্তায় টোটো চালানো যায়। সেখানে টাকা খরচ করে মোটর আইনে নিজেকে বেধে ফেলতে চাইছেন না তারা। কিন্তু এই মনোভাবের সঙ্গে জোরাল হচ্ছে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে পথচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি। কারণ কোনও টোটো কাউকে আঘাত করলে তার পরিচয় পাওয়ার কোনও উপায় নেই। এমনকি ইন্সুরেন্সের প্রশ্নও অধরা থেকে যাবে।
বালুরঘাট পুর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে হেলমেটহীন বাইকচালকদের ধরপাকড় করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার। সেখানে রাস্তার উপর সারি সারি নম্বরহীন টোটো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের বলার কেউ নেই। এক টোটোচালক অমিত হালদারের মতে, ‘এর আগে ভেবেছিলাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেব। কিন্তু ৯০ শতাংশ টোটো দেখছি রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই চলছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাই টাকা ফালতু খরচ করতে ইচ্ছে হয়নি।’
মঙ্গলপুর এলাকার টোটোচালক কনক দাস রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের ভয় দেখিয়ে এক কথায় বোকা বানানো হল। নম্বর প্লেট ছাড়া টোটোর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এই বৈমাত্রিক সুলভ আচরণ মোটেই কাম্য নয়।’
এই বিষয়ে আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক সৌমেন বিশ্বাস বলেন, ‘নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। কিন্তু আগের চেয়ে টোটো রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। তবে নম্বরহীন টোটো নিয়ে আমরা পদক্ষেপ করব। এই নিয়ে পথ নিরাপত্তা বৈঠকে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আসলে পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে গিয়েছে। কেন রেজিস্ট্রেশন এখন হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলে আলিপুর কোর্ট থেকে আধিকারিকদের ডাকা হয়েছে। এখন রেজিস্ট্রেশন চললেও যে কোনও সময় এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’