প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: চার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিল এক সঙ্গে বিরোধী শূন্য লোকসভায় পাশ করিয়ে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার কংগ্রেস নেতা তথা ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধির লোকসভায় প্রত্যাবর্তন করেন। কেন্দ্রীয় শিবিরের তরফে তাঁকে অপমান এবং অবমাননাকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এদিন একযোগে নিম্নকক্ষের অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান কংগ্রেস সহ বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা। এরপর বিরোধী শূন্য কক্ষে অশ্বিনী বৈষ্ণোর ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল, ড. জিতেন্দ্র সিং-এর নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. মনসুখলাল মান্ডব্যের ফার্মাসি বিল এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘোয়াল কর্তৃক মিডিয়েশন বিলের মতো একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হয় লোকসভায়।
সোমবার ১৩৬ দিন পর ফের সংসদে পা রাখেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। সোমবার লোকসভায় প্রবেশ করা মাত্র রাহুলের বিরুদ্ধে চিনা অনুদান এবং বেজিংয়ের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে তোপ দাগেন বিজেপি নেতা ও সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর সুরে সুর মিলিয়ে প্রবল হইচই বাধিয়ে দেন ট্রেজারি বেঞ্চের অন্য প্রতিনিধিরাও। লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লার অনুপস্থিতিতে চেয়ার প্যানেল কিরিটভাই সোলাঙ্কির বিতর্কিত নির্দেশে কীভাবে প্রথাবিরুদ্ধ উপায়ে বলার ছাড়পত্র পেলেন নিশিকান্ত দুবে, কীভাবে রাহুলের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করার ‘স্পর্ধা’ পেলেন তিনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর চৌধুরী। সংসদীয় রুল ৩৫৩ অনুসারে ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ তুলে জবাব চান অধীর। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে তথ্য এবং প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে দ্রুত আলোচনায় সায় দেন সোলাঙ্কি। এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে আলোচনায় অংশ গ্রহণে বিরত থাকেন বিরোধীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বিলের বিরোধিতা করেন বর্ষীয়ান বিজেডি নেতা এবং সাংসদ ভর্তুহরি মাহতাব। বিরোধী শিবিরের কোনও নেতারা এই আলোচনায় অংশ না করায় ধ্বনিভোটে বিলটি সহজেই পাশ করাতে সক্ষম হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো।
ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল পাশ হওয়া মাত্র চেয়ার প্রদত্ত ‘রুলিং’ মেনে পুনরায় বক্তব্য রাখার ছাড়পত্র পেয়েই সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন তোপ দাগেন অধীর চৌধুরী। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের মধ্যেই মাইক বন্ধ করে দেন স্পিকার প্যানেল কিরিটভাই সোলাঙ্কি, যার জেরে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ‘হাই টেবিলে’র দিকে এগিয়ে আসেন অধীর, সংসদীয় পরিচলন নীতির তীব্র সমালোচনা করে ওয়াক আউটের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিরা লোকসভা খালি করে বেরিয়ে যান। এরপর কার্যত বিনা বাধায়, বিরোধী শূন্য কক্ষে একের পর এক তিনটি বিল যথাক্রমে, ড. জিতেন্দ্র সিং-এর অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. মনসুখলাল মান্ডব্যের ফার্মাসি বিল এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘোয়াল কর্তৃক মিডিয়েশন বিলের মতো সব গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হয় লোকসভায়।
বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় জয়সওয়াল বলেন, “রাহুল সংসদে ফিরেছেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু তাঁর জন্য সংসদীয় পরিকাঠামোর সঙ্গে আপোষ করা অনুচিত। তাঁকে বীরের অভ্যর্থনা দেওয়া হচ্ছে, তাঁর অপরাধ ঢাকার জন্য বিরোধী শিবির ওয়াক আউট করছেন, বিলের আলোচনা থেকে বিরত থাকছেন, তা মানা যায় না।”
কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ হিবি ইডেন বলেন, “অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় রাহুল গান্ধিকে অপমান করা হল, কদর্য ভাষায় অপমান করা হল। এর জবাব বিলে নয়, ব্যালটে ঠিকই পাবে বিজেপি সরকার।”