মাদারিহাট: জলদাপাড়ায় সোমবার সকালে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর্যটকদের পথ আটকে দাঁড়িয়ে রইল একটি গন্ডার ও সেটির শাবক। তিনবার গাড়ির দিকে কিছুটা তেড়ে এলেও কারও কোনও ক্ষতি করেনি মা গন্ডারটি। শেষপর্যন্ত বনকর্মীরা এসে পটকা ফাটিয়ে গন্ডার দুটিকে জঙ্গলের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন গাড়িতে থাকা পর্যটকরা। উল্লেখ্য, গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি এই গন্ডার দুটির ধাক্কায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের সাফারির গাড়ি উলটে গিয়েছিল। গুরুতর জখম হয়েছিলেন চারজন পর্যটক।
এদিন সকালে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সাফারির দুটো গাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ গুরুং ও ফাল্গুনী চৌধুরীর দুটো পরিবারের ১১ জন সদস্য। বন্যপ্রাণীদের দেখার আনন্দ নিয়েই এদিন সকালে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। ঘড়িতে তখন সকাল আটটা, পর্যটকদের গাড়ি দুটি জলদাপাড়ার হরিণডাঙ্গা নজরমিনার থেকে ফিরছিল। সেসময় পর্যটকদের বন্যপ্রাণী দেখার স্বাদ পূরণ হলেও কিছুটা সংশয়েও পড়ে যান তাঁরা।
কারণ, ১১ জনের ওই পর্যটকের দলটি দেখে, তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মা গন্ডার ও তার শাবক। কখনও তাঁদের গাড়ির দিকে একটু এগিয়ে আসছে আবার ফিরে যায় মা গন্ডারটি। মা গন্ডারটি গাড়ির দিকে এগিয়ে এলেই ভয়ে সকলের চোখেমুখের করুণ অবস্থা হয়। আবার ফিরে যেতেই চোখেমুখে স্বস্তির শ্বাস। এইভাবেই প্রায় এক ঘণ্টা তাঁদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকে মা গন্ডারটি। শেষে বনকর্মীরা এসে পটকা ফাটাতেই জঙ্গলের ভেতর ঢুকে যায় মা ও শাবক।
এদিন পাঁচজন পর্যটককে সাফারির গাড়িতে নিয়ে জলদাপাড়া যান শিবনাথ শা। হরিণডাঙ্গা নজরমিনার থেকে তিনি ও স্বপন কার্জি দুটো গাড়ি নিয়ে প্রধান রাস্তার দিকে আসার সময় দেখেন মা গন্ডার ও তার শাবক রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। কয়েকবার গাড়ির লাইট জ্বালিয়েও নড়ানো যায়নি গন্ডার দুটিকে। কয়েকবার তো তেড়েও এসেছিল। এদিকে, এরই মাঝে তখন অন্যদিক থেকে আরও দুটি সাফারির গাড়ি চলে আসে। ফলে গন্ডারটি মাঝখানে পড়ে যায়। শিবনাথের কথায়, দীর্ঘ সময় ধরে অনেক চেষ্টা করেও গন্ডারটিকে সরাতে পারেননি। শেষে উপায় না দেখে তিনি হরিণডাঙ্গা নজরমিনারে থাকা বনকর্মীদের খবর দেন। তাঁরা এসে গন্ডার দুটিকে জঙ্গলের ভেতর ঢুকিয়ে দেন।
গাড়ির চালক ও গাইডরা জানান, এই মা গন্ডার ও তার শাবক গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে এখানেই ধাক্কা দিয়ে উলটে দিয়েছিল পর্যটক সহ একটি সাফারির গাড়ি। এদিন সকালে তাঁরা সেই প্রমাদ গুনছিলেন। দুটি গাড়িতে থাকা পর্যটক ইন্দ্রজিৎ ও ফাল্গুনীর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, ‘আমরা তো ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। যেভাবে মাঝে মাঝে তেড়ে আসছিল। বরাতজোরে বেঁচে গেলাম।’