প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ১০০ দিনের কাজের বকেয়ার দাবিতে দিল্লিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এমনকি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাঁর দেখা না মেলায় কৃষি ভবনেই ধর্নায় বসেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু সরাসরি কোনও মন্ত্রীর হাতে রাজ্য সরকারের দাবিদাওয়া সম্বলিত চিঠি তুলে দিতে পারেননি ঘাসফুল শিবিরের প্রতিনিধিরা। এবার পি-২০-এর মঞ্চেই সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ফগগন সিং কুলস্তের হাতে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া সহ যাবতীয় দাবিদাওয়া সম্বলিত রিপোর্ট তুলে দিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং৷
শুক্রবার দিল্লির যশভূমি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সূচনা হয় দু’দিনের জি-২০ স্পিকার্স কনফারেন্স পি-২০ সামিট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লি উড়ে এসেছেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বিধানসভার কার্যালয় সচিব সহ রাজস্থান বিধানসভা অধ্যক্ষ সিপি জোশির সঙ্গে ‘যশভূমি’তে পা রাখেন বিমানবাবু। কনভেনশন সেন্টারে পা দিয়েই খোঁজ নেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বা তাঁর ডেপুটি সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতি এসেছেন কিনা। জানা যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা তাঁর ডেপুটি কেউই উপস্থিত ছিলেন না পি-২০’র উদ্বোধনী মঞ্চে।
তবে মন্ত্রকের তরফে সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন গিরিরাজ সিংয়ের আরেক ডেপুটি, গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ফগগন সিং কুলস্তে। জানা গিয়েছে, পি-২০’র করিডরেই কুলস্তের হাতে যাবতীয় চিঠি তুলে দেন বিমানবাবু। ফগগন সিং কুলস্তে বলেন, ‘আপনারা তো কোনও গাইডলাইন, নিয়মকানুন মানেন না!’ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘রিপোর্ট দেখুন। ১০০ দিনের কাজে আদৌ নিয়ম উলঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে।’ এরপর, দিল্লির বুকে তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলন, রাজঘাট, যন্তরমন্তর এবং কৃষি ভবনে ধর্না প্রদর্শন নিয়ে তৃণমূলের ভূমিকা বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি জানান, চাইলে সে রাতে সাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতি তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেই পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি পিছটান দেওয়ায়, মন্ত্রকেই ধর্নায় বসে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা।
বিমানবাবু এও বলেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইন মেনে চলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ও সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু বিজেপি অহেতুক এ নিয়ে নিম্নমানের রাজনীতি করছে। বাংলার হাজার হাজার মানুষের পেটে ভাত জুটছে না। প্রয়োজনে ১০০ দিনের কাজে ‘অভিযুক্ত’দের চিহ্নিত করে উচিত পদক্ষেপ নিক সরকার, কিন্তু যারা নির্দোষ তাদের প্রাপ্য থেকে যেন বঞ্চিত না করা হয়।’ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি খতিয়ে দেখবেন বলে আস্বস্ত করেছেন ফগগন সিং কুলস্তে। পি-২০ অধিবেশনের করিডরে দাঁড়িয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘বিধানসভার অধ্যক্ষ হিসেবে নয়, রাজ্যের একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে আমার কর্তব্য করলাম। ১০০ দিনের কাজের রিপোর্ট তুলে দিলাম মন্ত্রীর হাতে। কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানের উপর নির্ভর করবে আন্দোলনের অভিমুখ।’