বর্ধমান: শোনা যায় নিজের ছানা মনে করে কোকিলের ছানাকে বড় করে তোলে কাক। তবে এহেন বিভ্রান্তি যে শুধু পক্ষীকূলের হতে পারে এমনটা কিন্তু নয়। মানুষের ক্ষেত্রেও হতে পারে। সম্প্রতি মুরগির ছানা ভেবে ময়ূরের ছানাকে বড় করে তুলেছেন পূর্ব বর্ধমানের এক বাসিন্দা। ছানাটি বড় হতেই বিষয়টি জানতে পেরে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, মুরগির ছানা ভেবে সেটিকে পুষতে দিয়েছিলেন তাঁর এক আত্মীয়। কিন্তু সেটা যে আসলে ময়ূর তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পাখিটির আসল স্বরূপ যখন প্রকাশ্যে আসে, ততদিনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এবার শুধুমাত্র মায়ায় পড়ে গিয়ে ময়ূরটিকে আর বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারেননি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মীরেপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র কিস্কু। আর বাড়িতে ময়ূরটিকে আশ্রয় দিয়ে রাখাতেই এখন চুড়ান্ত বিপাকে পড়ে গিয়েছেন তাঁরা। বাড়িতে ময়ূর পোষার কারণ নিয়ে বন দপ্তরের কর্মীদের কাছে তাঁদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বন দপ্তরের লোকজন ময়ূয়টিকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানালে তাতে কিস্কু পরিবারের সদস্যরা সম্মতি দিয়েছেন। ময়ূরটিকে খাঁচাবন্দি করতে শনিবার পূর্ণচন্দ্র কিস্কুর বাড়িতে পৌঁছোন বনকর্মীরা এবং বর্ধমানের সোসাইটি ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু সারাদিন অনেক চেষ্টা চালিয়েও বনকর্মীরা কিছুতেই ময়ূয়টিকে খাঁচাবন্দি করতে পারেন নি। তবে হাল ছাড়েননি বনকর্মীরা। দিন গড়িয়ে রাত হয়ে যাওয়ার পরেও বন দপ্তরের কর্মীরা ময়ূরটিকে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাড়িতে ময়ূর পোষা নিয়ে পূর্ণচন্দ্র কিস্কু বা তাঁর পরিবারের কেউ এদিন সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। তবে কিস্কু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর সোসাইটি ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সংস্থার পক্ষে অর্ণব দাস বলেন, ‘পূর্ণচন্দ্র কিস্কু চাকুরিজীবী। প্রায় নয় মাস আগে তাঁর এক আত্মীয় খেপা কিস্কু মুরগির ছানা বলে দুটো ছানা পোষার জন্য দিয়েছিলেন। যদিও খেপা কিস্কুও জানতেন না যে ওটা মুরগির ছানা নয়। বাড়ির অন্য মুরগিদের সঙ্গেই ময়ূরটি থাকতে শুরু করে। সারাদিন গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ময়ূরটি সন্ধ্যায় পূর্ণচন্দ্রর বাড়িতে ফিরে আসে। ময়ূরটির প্রতি মায়া জন্মে যায় বাড়ির লোকজনের। তাই ময়ূরটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারেননি।‘ অর্ণব দাস আরও বলেন, ‘পূর্ণচন্দ্র কিস্কু হয়তো মিথ্যা বলছেন না। তবে জাতীয় পাখি ময়ূর কোনভাবেই বাড়িতে পোষা যায় না। সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ময়ূরটি বনদপ্তরের হাতে তুলে দিতেই হবে।‘