উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে। ভালোবাসার মিষ্টি মিষ্টি টেক্সট চালাচালি, ফ্লার্টি ইমোজির মাধ্যমে হৃদয়ের অবদমিত আবেগকে উসকে দেওয়া যে কতবড় বিপদ ডেকে আনতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ফিলাডেলফিয়ার (Philadelphia) বাসিন্দা মহিলা প্রযুক্তি পেশাদার শ্রেয়া দত্ত। সম্প্রতি প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে ওই মহিলাকে। খুইয়েছেন নিজের সঞ্চয়ের ৪,৫০,০০০ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় তা প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি। নিজের অবসরের সমস্ত সঞ্চয় হারিয়ে এখন ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে রয়েছেন শ্রেয়া।
কীভাবে এই প্রতারকদের খপ্পরে পড়লেন শ্রেয়া? জানলেও চমকে উঠতে হয়। অত্যাধুনিক এই ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতির পদ্ধতিটি ‘পিগ বুচারিং’ (Pig butchering) নামে পরিচিত। সাইবার দুনিয়ায় টার্গেট বাছাই করার আগে রীতিমতো হোমওয়ার্ক করে নেয় প্রতারকরা। টার্গেটের মানসিক অবস্থা বুঝে তাঁকে ফাঁদের ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যেমন বিবাহ বিচ্ছিন্ন শ্রেয়ার মানসিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে প্রতারকরা।
ঘটনার সূত্রপাত গত জানুয়ারিতে, যখন একটি অনলাইন ডেটিং অ্যাপের (Online dating app) মাধ্যমে শ্রেয়ার সঙ্গে অ্যানসেল নামক এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে ফিলাডেলফিয়া নিবাসী একজন ফরাসি মদ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ডেটিং অ্যাপে কথা শুরু হওয়ার কিছুদিনের পরই হোয়াটসঅ্যাপে তাঁদের কথোপকথন শুরু হয়। হোয়াটসঅ্যাপেই মেসেজ, ফ্লার্টি ইমোজি এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁদের বার্তালাপ চলতে থাকে। সম্প্রতিই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল শ্রেয়া দত্তের। আর এই দুর্বলতাকেই দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে ফের যত্নশীল সঙ্গী পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাঁর মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিল অ্যানসেল। কখনও একে অপরের সম্মুখীন না হলেও গত বছর প্রেম দিবসে অ্যানসেল ফিলাডেলফিয়ার একটি ফুলের দোকান থেকে ফুলের তোড়া পাঠিয়াছিলেন তাঁকে। আর এতেই মজে যান শ্রেয়া।
এসব চলাকালীনই তাঁকে স্ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিপুল অর্থ লাভের প্রস্তাব দেন অ্যানসেল। তারপরই অ্যানসেলকে বিশ্বাস করে তার পাঠানো লিঙ্ক থেকে ক্রিপ্টো ট্রেডিং অ্যাপ ডাউনলোড করে তাঁর সঞ্চয় বিনিয়োগ করতে শুরু করেন শ্রেয়া। প্রথম পর্যায়ে অ্যাপটি বিনিয়োগ থেকে করা লাভ তুলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এরপর তিনি আরও অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকেন।
তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অ্যানসেল তাঁকে ঋণ নিয়ে আরও অর্থ বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করতে থাকেন। গতবছর মার্চ মাস নাগাদ তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু অর্থ তোলার চেষ্টা করলে অ্যাপটি ব্যক্তিগত ট্যাক্সের দাবি করলে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি তাঁর লন্ডন নিবাসী ভাইকে এবিষয়ে জানান। একটু খোঁজ খবর করতেই একজন জার্মান ফিটনেস ইনফ্লুয়েন্সার হিসাবে অ্যানসেলের আসল পরিচয় প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপরই তিনি যে বাজেভাবে প্রতারিত হয়েছেন একথা বুঝে যান। বিপুল টাকা খুইয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন শ্রেয়া। বর্তমানে তাঁর থেরাপি চলছে এবং ঋণ পরিশোধ করার জন্য তিনি একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন।
ক্রিপ্টকারেন্সিতে অর্থ বিনিয়োগের এই জালিয়াতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অপরাধী সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত বলে মনে করা হচ্ছে এবং এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। গত বছর ৪০ হাজারেরও বেশি লোকের ‘পিগ বুচারিং’ সহ ক্রিপ্টোকারেন্সি জালিয়াতি থেকে মোট ৩.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সেই অনুমানও সম্ভবত কম, কারণ অনেক ভুক্তভোগী লজ্জার কারণে অপরাধের বিষয়ে রিপোর্ট করেন না।