আলিপুরদুয়ার ব্যুরো: একচালা একটা ঘর। টিনের চাল এবং বেত ও পাটকাঠির বেড়া দেওয়া ওই ঘরে কোনও দরজা নেই। দেওয়ালে একটা পোস্টার লাগানো। তাতে লেখা ‘কুমারপাড়া রাজবংশী ভাষা প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ঘরের ভিতর পুরোটাই ফাঁকা। এক পাশে একটা টেবিল আর টেবিলের উপর ভাঁজ করা ত্রিপল। চকোয়াখেতি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমারপাড়া গ্রামের স্কুলটির দৃশ্য এমনই।
কালচিনি ব্লকের দক্ষিণ লতাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় বলতে কৃষিজমিতে সদ্য পোঁতা কয়েকটি বাঁশের ওপর টিনের ছাউনি। পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগেন্দ্রনগরের স্কুলটিও একচালা টিনের ঘর। তিনদিকে টিনের বেড়া। সামনের দিকটায় টিনের অর্ধেক বেড়া।
স্কুল কথাটা শুনলেই চোখের সামনে ভাসে ক্লাসরুম, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড, চক-ডাস্টারের কথা। আলিপুরদুয়ার জেলার ৮টি রাজবংশী ভাষার স্কুলের ক্ষেত্রে সেসব যেন ‘দিবাস্বপ্ন’। অথচ সোমবারই কোচবিহার থেকে উত্তরবঙ্গের এমন দুই শতাধিক রাজবংশী ভাষার স্কুলের উদ্বোধন করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের ৬টি এবং কালচিনি ব্লকে ২টি স্কুল রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্কুলের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় রাজবংশীভাষীরা উচ্ছ্বসিত ঠিকই, কিন্তু চোখে পড়ছে পরিকাঠামোর বেহাল দশাটাও।
উত্তর শিমলাবাড়ির স্কুলটির দেওয়াল টিনের। ভিতরে তিনটে ভাঙা বেঞ্চও রয়েছে। পরিকাঠামোর নামে যা রয়েছে, তা যে আদতে কিছু না থাকারই নামান্তর, পরোক্ষে মেনে নিচ্ছেন সেই স্কুলের শিক্ষক তথা জিসিপিএ (বংশীবদনপন্থী)-র আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক গণেশ রায়। বললেন, ‘আমরা নিজেদের মতো করে এতদিন স্কুলগুলো চালিয়েছি। রাজ্য সরকার যখন স্কুলগুলোর অনুমোদন দিয়েছে, তখন পরিকাঠামোর উন্নতিও তারাই করবে। ক্লাসরুমের সঙ্গে শৌচালয় এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা দরকার।’
পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিরুবাড়ি, যোগেন্দ্রনগর ও শালকুমার-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনপাড়া, মুন্সিপাড়ায় ৪টি রাজবংশী ভাষার প্রাথমিক স্কুলের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সোমবার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার ওইসব গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, স্কুলগুলির পরিস্থিতি অনেকটা ঢাল নেই তরোয়াল নেই, এ যেন নিধিরাম সর্দারের মতো। সিরুবাড়ির স্কুলটির অবস্থা একটু ভালো। টিনের দোচালা। রয়েছে টিন ও দরমার বেড়া। তবে সেখানেও বেঞ্চ নেই। চটে বসতে হয় পড়ুয়াদের। শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা তো প্রায় সবক্ষেত্রেই দূর অস্ত।
শালকুমার-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীবাস রায়ের বক্তব্য, ‘আপাতত গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পানীয় জল ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ধাপে ধাপে বাকি পরিকাঠামোগত উন্নতি হবে।’
কালচিনি ব্লকের নিমতি দোমোহনির বর্মনপাড়ার স্কুলটির সামনে দরমার বেড়া দেওয়া। ওপরে টিনের ছাউনি রয়েছে। আর দু’পাশে টিনের বেড়া। জিসিপিএ’র কালচিনি ব্লক সম্পাদক নিখিল বর্মন জানালেন, ২০১৭ সাল থেকে তাঁরা স্কুল দুটিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে পড়াশোনা চালাচ্ছেন। রাজ্য সরকার দ্রুত স্কুল দুটির পরিকাঠামোর উন্নয়ন করুক, পাকা ঘর বানিয়ে দিক এমন দাবি জানিয়েছেন তিনিও।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও চাপা অসন্তোষ রয়েছে। যেমন দক্ষিণ লতাবাড়ির বাসিন্দা প্রশান্ত বর্মনের অভিযোগ, ‘বোর্ডের সঠিক নিয়ম মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হলে জিসিপিএ’র সঙ্গে যুক্ত নয় এমন রাজবংশীরাও উপকৃত হবেন।’