ধূপগুড়ি: গত চার দশকে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায় আলু চাষ, সংরক্ষণ এবং কেনাবেচাকে (Potato business) কেন্দ্র করে শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। তা সত্ত্বেও চার দশকে বাম বা তৃণমূল (TMC) কোনও সরকারই উত্তরবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ি জেলার আলু চাষ নিয়ে সুস্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। ফলে বাজারের চাহিদা এবং একাংশ বড় পুঁজিপতির অঙ্গুলিহেলনেই আলুর কারবার চলছে। যখন বাজার পড়তির দিকে থাকে তখন এনিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও বাজার ঘুরে গেলেই সবাই সবটা ভুলে যান। ফলে গভীর অনিশ্চয়তা এবং ফাটকার ওপরেই আলুর কারবার চলছে।
আলু নিয়ে সরকারি উদাসীনতায় হতাশ উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জগদীশ সরকারের বক্তব্য, ‘আজও আলুবীজের জন্যে ভিনরাজ্যের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। সহায়কমূল্যে আলু কেনার কোনও উদ্যোগ নেই। আলু চাষের উন্নয়নে গবেষণাগার না থাকায় নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক ব্যবহারে ফলন কমছে। আলুকেন্দ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প চালু না হওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কে ভুগতে হয়।’
জেলার চা বা পর্যটনের তুলনায় দুয়োরানির অবস্থা আলুর। অথচ আর্থিক লেনদেনে পর্যটন তো বটেই চা শিল্পকেও অনায়াসে টক্কর দিতে পারে জেলার আলুকে কেন্দ্র করে হওয়া আর্থিক লেনদেন। সরকারি হিসেবে চলতি বছর জেলায় আলু চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এবছর হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ন্যূনতম ২৫ হাজার ৫০০ কেজি৷ বর্তমানে সেই আলুর পাইকারি দর ১২ টাকা কেজি হিসেব কষলে এবছর জেলায় আলু কেনাবেচায় মোট লেনদেনের পরিমাণ ইতিমধ্যেই ১ হাজার ১১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
চলতি বছর জেলায় আলুর মোট লেনদেন এক হাজার চারশো কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। এক মরশুমে জেলায় একটি ফসলকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন সত্ত্বেও আলু নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্যে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের প্রতি অভিযোগের সুরে বিদায়ি সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় বলেন, ‘হুটহাট আলু রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে জলপাইগুড়ির আলুর বাজার নষ্ট করেছে তৃণমূল সরকার। গ্রেডিং সিস্টেম বাধ্যতামূলক করতে না পারা, আলুকেন্দ্রিক শিল্পের ব্যবস্থা না করতে পারা রাজ্যের ব্যর্থতা৷’।
কৃষক, শ্রমিক, বীজ বিক্রেতা, পরিবহণ শ্রমিক, সার ও বস্তা বিক্রেতা, হিমঘরকর্মী এবং এই চাষ ও কারবারে যুক্ত মানুষের সংখ্যা হিসেব করলে জেলায় আলুর সঙ্গে কমবেশি সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ জড়িত রয়েছেন। সরকারি তথ্যানুসারে, গত ছয় মাসে জেলায় যে পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে তাতে ন্যূনতম সাড়ে ছয় লাখ শ্রম দিবস সৃষ্টি হয়েছে।
ধূপগুড়ির (Dhupguri) প্রাক্তন বিধায়ক মমতা রায় বলেন, ‘কেন্দ্রের সরকার সারের দাম কমাতে পারেনি এবং রাজ্যের সরকার আলু চাষের মুনাফায় ভাগ বসিয়েছে। এমনকি বন্ডের কালোবাজারি করেছে শাসক নেতারা৷’ যদিও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মহুয়া গোপের এবিষয়ে বক্তব্য, বামেদের ৩৪ বছরে জেলায় যা হিমঘর ছিল আজ তার দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষি দপ্তর এবং কৃষিজ বিপণন দপ্তর নিয়মিত নজরদারি করছে। এই কারণেই গত এক দশকে আলুর ফলন যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে রুজি রোজগার।