শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ভাইরাসমুক্ত আলু উৎপাদনে হরিয়ানা থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার চারা এসেছে উত্তরবঙ্গে। এপিকাল রুটেড কাটিং (এআরসি) পদ্ধতিতে তৈরি চারাগুলি ইতিমধ্যে উত্তরের পাঁচ হাজার বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়ে গিয়েছে। এআরসি’র উত্তরবঙ্গের কোঅর্ডিনেটর মেহফুজ আহমেদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আলু গবেষণাকেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের এই নতুন যৌথ প্রকল্প। আলুবীজের জন্য যাতে উত্তরবঙ্গের চাষিদের আর ভিনরাজ্যের ওপর নির্ভর করে না থাকতে হয়, সেটা মূল উদ্দেশ্য।পাশাপাশি খরচ সাশ্রয়ী এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে চাষিদের আয়ের পথও সুগম হবে।’
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে কৃষি দপ্তরের তরফে একাধিক জেলার ফার্মার্স প্রোডিউসার্স ক্লাব (এফপিসি), ফার্মার্স প্রোডিউসার্স অর্গানাইজেশন (এফপিও) ও ফার্মার্স ইন্টারেস্ট গ্রুপের (এফআইজি) হাতে আলুর চারা তুলে দেওয়া হয়েছে।প্রথম ধাপে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিস্যুকালচারের মাধ্যমে তৈরি করা চারাগুলি জমিতে রোপণ করা হয়েছে।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি হরিয়ানার মর্নিতে তৈরি এআরসি’র চারা বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছায়। মঙ্গলবার আসে চার হাজারের মতো চারা। চারাগুলি বিলি করা হয়েছে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি, রাজগঞ্জ, দার্জিলিং সমতলের খড়িবাড়ির গৌরসিংজোত, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, কালিম্পংয়ের সুকইয়াং ইত্যাদি জায়গায়। কৃষিকর্তারা জানাচ্ছেন, এই উন্নত চারা থেকে জনপ্রিয় লাল আলু পাওয়া যাবে। পোশাকি নাম খুপরি উদই। এখন কুয়াশার কারণে কয়েকটি এলাকা থেকে সাধারণ আলুবীজে ধসা রোগের খবর মিলেছে। কিন্তু এআরসি’র বীজে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। পাশাপাশি এই নয়া আলুবীজ তাপমাত্রা সহনশীল। জলপাইগুড়ির উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বৃন্দাবন রায় বলেন, ‘শুধু বিনামূল্যে হরিয়ানা থেকে নিয়ে আসা আলুর চারা বিতরণ করাই নয়। ধারাবাহিকভাবে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও চলছে। এই পদ্ধতি এরপর সব জায়গায় চালু হয়ে যাবে।’
এআরসি নিয়ে পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, হিমাচলপ্রদেশের কৃষিকর্তা, বীজ উৎপাদক ও ক্রেতাদের সঙ্গে জলন্ধরে আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন মেহফুজ। তিনি জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি প্রথম শুরু হয় কেন্দ্রীয় আলু গবেষণাকেন্দ্রের জলন্ধর শাখার বিজ্ঞানী অখিলেশকুমার সিংয়ের হাত ধরে। পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তরবঙ্গের জলবায়ুতে এআরসি গেমচেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে বলে জানালেন তিনি। ফালাকাটার মান্না চৌধুরী নামে এক আলুবীজ উৎপাদক বলেন, ‘এর সাফল্য আশাতীত।’