সোনাপুর: পরকীয়ার অভিযোগ তুলে ধুন্ধুমার কাণ্ড দক্ষিণ কামসিং গ্রামে। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের এই গ্রামে শনিবার সকালে দুই তরুণ-তরুণীর বিরুদ্ধে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তাঁদের শাস্তিবিধান করেন গ্রামের মোড়লরা। তাঁদের গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। সেইসঙ্গে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণও নাকি রয়েছে তাঁদের কাছে। যদিও দুজন প্রাপ্তবয়স্কের সম্পর্ককে নিয়ে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সচেতন বাসিন্দারা। এদিন ব্লকজুড়েই এ ঘটনা নিয়ে চর্চা চলেছে।
এদিন ওই দুজনকে নিগ্রহের পর গ্রামে যায় পুলিশ। স্থানীয়দের থেকেই ঘটনার খবর পেয়ে সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে ওই তরুণকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁকে সোনাপুর ফাঁড়িতে আটক করে রাখা হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয় নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা পড়েনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দক্ষিণ কামসিং গ্রামের ওই তরুণীর সঙ্গে কোচবিহার জেলার পুণ্ডিবাড়ির ওই তরুণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তরুণীর স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অরুণাচলপ্রদেশে কর্মরত। দুই সন্তান নিয়ে বাড়িতে একাই থাকতেন ওই তরুণী। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুণ্ডিবাড়ির ওই তরুণ গত দু’দিন ধরে ওই তরুণীর বাড়িতে এসে থাকছিলেন। বিষয়টি দেখে গ্রামের অনেকের সন্দেহ হয়। গ্রামের কয়েকজন ওই তরুণীর কাছে তরুণের পরিচয় জানতে চান। তখন সেই তরুণী জানান, ওই তরুণ তাঁর জামাইবাবু। এই উত্তরে সন্তুষ্ট হননি গ্রামের সেই মাতব্বররা। শুক্রবার রাত জেগে গ্রামের কয়েকজন আবার ওই বাড়ি পাহারাও দেন। এদিন সকালে ওই তরুণ বাড়ি ছাড়ার সময় তাঁকে আটকানো হয়। গ্রামের লোকেরা জানাচ্ছেন, তখন নাকি চাপে পড়ে ওই তরুণ তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন। এরপরই ওই তরুণ ও তরুণীকে জুতোর মালা পরানো হয়। এরপর গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। অভিযুক্ত তরুণের চুলের কিছু অংশ আবার কেটে দেওয়া হয়।
গ্রামের পুরুষদের পাশাপাশি কয়েকজন মহিলাও এই ‘শাস্তিবিধানে’ শামিল হন। এব্যাপারে গ্রামের এক বাসিন্দার বক্তব্য, ‘এই রকম সম্পর্কে গ্রামে খারাপ প্রভাব পড়ে। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। ওই তরুণীর বাড়িতে তো দুটো বাচ্চা রয়েছে। ওদের উপরও তো এর প্রভাব পড়বে।’
ওই তরণীর স্বামীকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়ি ফিরছেন। এই ঘটনা জানাজানি হতেই বিভিন্ন আলোচনা শুরু হয়েছে। বর্তমান সময়েও কীভাবে এই রকম আইন হাতে নিয়ে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কাজল রায় বলেন, ‘গ্রামের কয়েকজন একটু মারধর করে। আমি গিয়ে সেটা আটকে দিই। এরপরই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’ তবে এভাবে যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় না, সেকথা মেনে নিয়েছেন তিনিও।