শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: বদলে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of North Bengal) স্নাতক স্তরের পাঠক্রম। ২০২৪-’২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কলেজগুলিতে শুরু হবে নতুন পাঠক্রমে পঠনপাঠন। জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy) মেনেই সিবিসিএস-এর প্রোগ্রাম কোর্সের আদলে চালু হচ্ছে তিন বছরের ‘ডবল মাইনর’ কোর্স। কমছে পেপারের সংখ্যাও। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি কোর্স (এমডিসি)-এর পাঠক্রমেও কাটছাঁট হচ্ছে। বর্তমানে চালু ‘সিঙ্গল মেজর ও ডবল মাইনর’ কোর্স তুলে দিয়ে ‘সিঙ্গল মেজর ও সিঙ্গল মাইনর’ কোর্স চালুর প্রস্তাবও হয়েছে।
প্রথম সিমেস্টারে ৯০ শতাংশের বেশি পড়ুয়ার ফেলের কারণ চিহ্নিত করার পরই পাঠক্রম সরলীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪৯টি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক এবং ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক দেবাশিস দত্ত, সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক শংকরী চক্রবর্তী সহ অন্য আধিকারিকরা। সেখানেই বিভিন্ন প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
পাঠক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে নয়জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্য সাতজন অধ্যক্ষ ছাড়াও পরীক্ষা নিয়ামক (Controller of Examinations) আছেন। কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কাউন্সিলের প্রধান সচিব নূপুর দাস। সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০ মার্চের মধ্যেই যাবতীয় কাজ শেষ করবে কমিটি।
দেবাশিস বলেন, ‘কলেজের পরিকাঠামো অনুসারে এমডিসি’র বিষয় পরিবর্তন, পেপারের সংখ্যা কমানো, পাঠক্রম সরলীকরণ এইসব কাজ হচ্ছেই। মেজর ও মাইনর-এর বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব জমা পড়েছে। কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে নতুন কোর্সগুলো চালু এবং পাঠক্রম পরিবর্তনের বিষয়ে সব অধ্যক্ষই একমত। মঙ্গলবার থেকেই আমরা বৈঠক শুরু করব।’
এদিন অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্নাতক স্তরের বোর্ড অফ স্টাডিজ (বিওএস)-এর চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা। অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে বিওএস-এর চেয়ারম্যানদের মতামতও নেওয়া হয়। শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষের বক্তব্য, ‘এমডিসি পড়ুয়াদের কাছে একেবারেই নতুন। সেখানে এমন সব বিষয় আছে যেগুলো পড়ানোর পরিকাঠামো বেশিরভাগ কলেজেই নেই। এমডিসিতেই বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। এমডিসি’র পাঠক্রম দ্বাদশ শ্রেণির মান অনুসারেই হওয়া উচিত। সেটা মেনে নিয়ে সেই পাঠক্রমে পরিবর্তন করার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পডুয়াদের উপর চাপ কমাতে সব কোর্সেই পাঠক্রম সরলীকরণ হচ্ছে। যেভাবে ভাবা হয়েছে তাতে পড়ুয়াদের উপকার হবে।’
স্নাতক স্তরে আগে চারটি পেপার পড়তে হত। বর্তমানে চার বছরের কোর্সে প্রত্যেক সিমেস্টারে পড়তে হচ্ছে ছয়টি পেপার। প্রস্তাবিত তিন বছরের স্নাতক কোর্সে প্রথম সিমেস্টারে পড়তে হবে পাঁচটি পেপার। বাকি সিমেস্টারগুলোতে চারটি করে পেপার পড়বেন ছাত্রছাত্রীরা। যে কলেজে যে বিষয়ে পড়ার মতো পরিকাঠামো বা শিক্ষক আছেন সেই কলেজে এমডিসিতে সেই অনুসারেই বিষয় নির্বাচন করা হবে।
বিকল্প কোর্স বেছে নেওয়ার সুযোগ না থাকায় নতুন শিক্ষানীতিতে প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রীই মেজর বিষয় নিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে। চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে পিছিয়ে পড়েছেন। এবার থেকে মেধার ভিত্তিতে চার বছরের মেজর কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন পড়ুয়ারা। বাকিরা বেছে নিতে পারবেন তিন বছরের মাইনর কোর্স। এই ব্যবস্থায় সব স্তরের ছাত্রছাত্রীরাই উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন ময়নাগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা ভেবেছে তাতে সবার মঙ্গলই হবে।’