প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বুধবার রাতে লোকসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস হল মহিলা সংরক্ষণ বিল৷ তাৎপর্যপূর্ণভাবে দিনের শেষে বিল নিয়ে সংসদে বক্তব্য পেশ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। আলোচনার সূচনালগ্নে মা সনিয়া গান্ধি যেখানে শেষ করেন, ঠিক সেখান থেকেই বুধবার রাতে এই বিল নিয়ে লোকসভায় বক্তব্য রাখার সময়ে মোদি সরকারকে তীব্রভাবে নিশানা করেন ওয়ানাড় সাংসদ রাহুল গান্ধি৷ তাঁর মতে, ‘এই বিল অসম্পূর্ণ, কারণ এখানে ওবিসি সংরক্ষণ নেই৷’ এই প্রসঙ্গেই বিজেপিকে নিশানা করে রাহুল গান্ধি বলেন, ‘এই বিলের মাধ্যমে জনতার নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আদানি ইস্যু সহ অন্যান্য ইস্যু আছে৷ আমাদের দেশ চালান আমলারা, আছেন মোট ৯০ জন সচিব৷ এই ৯০ জন সচিবের মধ্যে মাত্র তিনজন ওবিসি শ্রেণীর, যারা কেন্দ্রীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশের অধিকারী। এটা ওবিসি শ্রেণীর প্রতি অপমান- তাদের অসম্মান৷’ এই প্রসঙ্গেই রাহুলের দাবি, ‘এত ভয় কিসের? দ্রুত জাতিগত জনগণনা করে ফেলুন৷ ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের সরাসরি দিয়ে দিন৷ ডেটা রিলিজ করুন৷ না’হলে আমরা করব।’
রাহুল গান্ধির বক্তব্যকে খন্ডন করার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ নিজে৷ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘কয়েকটি দলের কাছে মহিলা স্বশক্তিকরণ রাজনৈতিক এজেন্ডা হতে পারে৷ আমার দল এবং আমার নেতা নরেন্দ্র মোদির কাছে মহিলা সংরক্ষণ বিল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটা মহিলাদের সম্মান জানানো, তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া৷’ মহিলাদের সরাসরি ৩৩ শতাংশ আসন দিয়ে যাওয়ার যে দাবি তুলেছেন রাহুল গান্ধি সেই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘আপনারা তো নিজেরাই সরাসরি আসন বন্টন করতে বলছেন৷ ওয়ানাড় (রাহুল গান্ধির নির্বাচনী কেন্দ্র) সংরক্ষিত হয়ে গেলে কী হবে? ওয়েসি সাহেবের হায়দরাবাদ সংরক্ষিত হয়ে গেলে কী হবে?’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথায় হেসে ওঠে সভাকক্ষ৷ কংগ্রেসের আমলের তথাকথিত নীতিপঙ্গুত্বকে এদিন আরও একবার তীব্র নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী৷ শেষে বিল পাসের জন্য সব দলের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আবেদন, ‘আমার একান্ত অনুরোধ, আসুন দলগত রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সবাই মিলে এই বিল পাস করি৷ আপনাদের যদি মনে হয় এই বিলে কিছু ভুল আছে, তাহলে আগামী দিনে তা শুধরে নেব।’
মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে ভোটাভুটির ঠিক আগের মুহূর্তে বিলের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেসকে তীব্র ভাবে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘোয়াল৷ ‘কংগ্রেস ওবিসির কথা বলছে কী ভাবে? ওরা তো বাবাসাহেব আম্বেদকরকে দুবার ভোটে হারিয়েছিল৷ তারপরেও থেমে না থেকে সংসদের সেন্ট্রাল হলে বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈলচিত্র বসাতে দেয়নি, এমনকি তাকে ভারতরত্ন সম্মানও দেয়নি কংগ্রেস, দিয়েছিল ভিপি সিং সরকার’- অভিযোগ করেন মেঘোয়াল৷ প্রয়াত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ একসময়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য এই বিল পাসের উপরে জোর দিয়েছিলেন৷ সুষমার সেই স্বপ্ন সার্থক করছে এই বিল, যা পাস করার উপযুক্ত সময় হল প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত অমৃতকাল, লোকসভায় দাবি করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী মেঘোয়াল৷