কলকাতা: শাস্ত্রীয় সংগীত জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত উস্তাদ রাশিদ খান (Rashid Khan)। কলকাতার (Kolkata) একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সংগীতশিল্পী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Cm Mamata Banerjee), পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে শিল্পীর মৃত্যুর ঘোষণা করেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক। এদিন হাসপাতালে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার ওঁর মুখটা খুব মনে পড়ছে। অল্প বয়সে চলে গেলেন। রাশিদ আমাকে মা বলতেন।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এটা বিরাট ক্ষতি। বাংলাকে ভালবাসতেন রাশিদ, তাই বাংলাতেই থেকে গিয়েছেন। ওঁর গান আর শুনতে পাব না, খুব খারাপ লাগছে।’ শিল্পীর শেষকৃত্যের প্রসঙ্গে বলতে বলতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না রাশিদ আর নেই। খুব খারাপ লাগছে।’ এদিন হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen) সহ আরও অনেকে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে শিল্পীর। তার আগে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন শিল্পীর অনুরাগীরা। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধে ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালেই থাকবে শিল্পীর মরদেহ। তারপর ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসদের দায়িত্বে শিল্পীর দেহ ‘পিস ওয়ার্ল্ডে’ নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। এদিন রাতে সেখানে থাকবে শিল্পীর দেহ। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় ‘পিস ওয়ার্ল্ড’ থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্র সদনে (Rabindra sadan)। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিবারকে অনুরোধ করে রবীন্দ্র সদনে শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যাতে সেখানে শিল্পীকে শেষবার দেখতে পারেন অনুরাগীরা। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সকলে। দুপুর ১টা নাগাদ কলকাতা পুলিশের (Kolkata police) তরফে রবীন্দ্র সদনেই গান স্যালুট জানানো হবে শিল্পীকে। এরপর শিল্পীর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাবেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
প্রসঙ্গত, উস্তাদ রশিদ খানের জন্ম উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বাদাউনে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা সংগীত পরিবারে। উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খানের ভাইপো তিনি। কাকাই প্রথম শিল্পীকে মুম্বই নিয়ে যান। সেখানেই গানের তালিম নেন। এরপর উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে বাড়িতেই গানের তালিম নেন। শাস্ত্রীয় সংগীতে তিনি মহীরুহ। একাধিক ছবির গান গেয়েছেন তিনি। ‘যব উই মেট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো বলিউড ছবির পাশাপাশি ‘মিতিন মাসি’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘কাদম্বরী’-র মতো বাংলা ছবিতেও রয়েছে তাঁর গান। প্রথমবার কনসার্টে গেয়ে যখন রাশিদ খান সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। এরপর ১৪ বছর বয়সে কলকাতায় আসেন রাশিদ খান। আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে শুরু হয় সঙ্গীতের পাঠ। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য মুদ্ধ করেছিল দেশকে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।
প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন রাশিদ খান। গত কয়েক বছর ধরেই ক্যানসারে ভুগছেন এই শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। শুরুতে মুম্বইয়ের (Mumbai) একটি নামী ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে সেখান থেকে কলকাতায় আসেন। এরপর মাঝে মধ্যেই অসুস্থতার কথা শোনা যেত তাঁর। সুস্থ হচ্ছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু এরপর ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায়, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এদিন তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হল না। ৫৫ বছর বয়সেই জীবনের সফর শেষ করলেন উস্তাদ রাশিদ খান।