মালদা: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময়ে টাকার বিনিময়ে কীভাবে চাকরি ‘বিক্রি’ হয়েছে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে প্রতারিত হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা তার প্রমাণ মিলেছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে তাবড় তাবড় ব্যক্তি। এবার মালদা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্র’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠল। এক ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, স্বপন মিশ্র’র কলার ধরে তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন এক ‘প্রতারিত’ চাকরিপ্রার্থী! শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তিকে ‘তুই-তুকারি’ করতেও শোনা গেল। চাকরিপ্রার্থী যুবকের একটাই প্রশ্ন, ‘বল কবে টাকা ফেরত দিবি?’ এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায়। যদিও ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ।
ভিডিও’য় দেখা যাচ্ছে, স্বপনবাবুর কলার ধরে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করছেন, ‘টাকা কবে দিবি?’ উত্তরে প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘টাইম দিতে হবে।’ পাল্টা প্রশ্ন, ‘কতদিন সময় লাগবে?’ সেই প্রশ্নের যদিও উত্তর মেলেনি। শুধু এক কথাই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আওড়ে চলেছেন, ‘টাইম দিলে হয়ে যাবে।’ স্বপন মিশ্রকে মারধরের পাশাপাশি হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
২০১৪ সালে স্বপন মিশ্র প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল। তাদের অনেকেই চাকরি পাননি। একজন বা দু’জন নয়, অসংখ্য ব্যক্তির তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এদিকে, টাকা নেওয়ার পর অভিযুক্ত উধাও হয়ে যান। যদিও এবিষয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অভিযোগ সত্যি হলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কারও আইন হাতে নেওয়া উচিত নয়।
স্বপন মিশ্র প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটি কয়েকমাস আগে তোলা। ঘটনার পর থেকে ওই তৃণমূল নেতাকে কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের মালদা জেলা সভাপতি আবদুল রহিম বকসি জানিয়েছেন, দল এই ধরনের ঘটনাকে কখনই অনুমোদন করে না। কারও যদি কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে পুলিশে অভিযোগ করা উচিত। কাউকে নিগ্রহ করা উচিত নয়। তবে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ জানান, এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। এরমধ্যে নতুন কিছু নেই। এদের নিয়েই তৃণমূল দলটা তৈরি। অন্যদিকে, সিপিএম নেতা তথা সিটুর জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা জানান, দলের এতো গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারি এমনটা করছেন এটা ভাবাই যায় না। আসলে তৃণমূল দলটা পুরোটাই চোরে ভর্তি, তাই অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও একাধিক শিক্ষাকর্তা জেলে রয়েছেন।