উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হল ২০১৬ সালের চাকরির প্যানেল। আদালতের যুগান্তকারী রায়ে চাকরি গেল মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের। চাকরি বহাল থাকল এই প্যানেলে চাকরি পাওয়া ক্যান্সার আক্রান্ত এক মহিলার। সোমবার এই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির স্পেশাল ডিভিশন বেঞ্চ।
জানা গিয়েছে, চাকরি বহাল থাকা এই মহিলার নাম সোমা দাস। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই রোগ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে এসএসসির নবম-দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থী হিসেবে কলকাতার গান্ধি মূর্তির পাদদেশে আন্দোলন করেছিলেন সোমা। বাকি আন্দোলনকারীদের থেকে সোমার গল্পটা অনেকটাই আলাদা৷ শুধু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়, সোমা লড়ছেন শারীরিক সমস্যার বিরুদ্ধেও৷ এই খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে। বিষয়টি নজরে আসতেই তাঁকে হাইকোর্টে ডেকে তাঁকে সরকারি চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়৷ সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করে সোমা জানিয়ে দেন, অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তিনি৷
প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, অন্য চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে সোমা তা করতে চান কি না। সোমা বলেন, ‘‘আমি শিক্ষিকাই হতে চাই। পাশাপাশি আমার মতো একাধিক চাকরিপ্রার্থী চাকরির জন্য লড়াই করছেন৷ ফলে আমার একার সমস্যার সমাধান হলেই হবে না।’’এরপরেই সোমা দাসের আর্জি শোনার পর স্কুলশিক্ষা দপ্তরকে চাকরির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিচারপতি বলেছিলেন, “প্রয়োজনে রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।” চাকরি না পেলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কীভাবে চিকিৎসা হবে, এ কথা ভেবেই সাত দিনের মধ্যে চাকরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। সেই নির্দেশের পরই শিক্ষকতার চাকরি পান সোমা দাস।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নবম, দশম, একাদশ দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগ-সহ তৃতীয় শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিপুল দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। অভিযোগ ওঠে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাধিক আধিকারিক-সহ রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের যোগসাজশ রয়েছে এই নিয়োগে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই সমস্ত মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সোমবার সেই মামলার চূড়ান্ত রায় দেয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির স্পেশাল ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৬ প্যানেলে চাকরি পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিলেও সোমা দাসের চাকরি বহাল থাকবে বলেও জানায় আদালত।
এই প্রসঙ্গে সোমা দাস বলেন, “ক্যান্সার আক্রান্ত বলে আমাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে সেটাই আমার আফশোস। কারণ আমি ২০১৬ সালের প্যানেলের যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। বঞ্চিতদের মঞ্চে আন্দোলন করেছিলাম চাকরি পাওয়ার আশায়। যোগ্যদের বঞ্চিত করে যাদের চাকরি হয়েছিল, তাঁদের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ে আমি খুশি। তবে আমি আশা করব, এবার যাঁরা যোগ্য তাঁরা প্রত্যেকেই চাকরি পাবেন।”