শিলিগুড়ি: নতুন করে ফের শিলিগুড়ির পোড়াঝাড় এলাকায় সরকারি জমি দখল করে বিক্রি শুরু হয়েছে। সেচ দপ্তরের জমি প্লটিং করে কাঠা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। দালালদের এমনই ক্ষমতা যে নদীর চর পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। আর সেই চরের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে বাড়ি, গুদাম। অভিযোগ, সেচ দপ্তরের একাংশ, রজগঞ্জ ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের একাংশ এবং স্থানীয় নেতাদের একাংশের মদতেই এই জমিগুলি বিক্রি করে হাতবদল হচ্ছে। স্থানীয় দালাল তো রয়েছেই, শহরের অন্যান্য এলাকার দালালেরা গিয়েও ওই এলাকায় সরকারি জমি বিক্রি করে মোটা টাকা কামাই করছে। পোড়াঝাড়ে জলাভূমি, নদীর চর দখল হওয়া নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন। কত সরকারি জমি এই মুহূর্তে দখল হয়ে রয়েছে তা জানতে চেয়ে সংগঠনগুলি তথ্য জানার আইনে জেলা শাসকের কাছে আবেদনও করেছে। এরপরেই পুরো বিষয়টি সামনে এসেছে। তাই পুরো বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলার পথে এগোচ্ছেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির কর্মকর্তারা।
এই বিষয়ে রাজগঞ্জের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুখেন রায়ের বক্তব্য, ‘আমার কাছে কোনও মহল থেকেই এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। এখন অভিযোগ এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রাজু মণ্ডল বলেন, ‘আমি তো শুনি ওই জমিগুলির এলআর খতিয়ানের কাগজ রয়েছে। মাঝে মাঝেই লোক এসে দাবি করে আমার জমি।’ কিন্তু নদীর চরের এলআর কী করে হল? সেই প্রশ্নের তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি।
শিলিগুড়ির পোড়াঝাড়ে সরকারি জমি দখল করে বিক্রির ছক দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। মাঝে উত্তরবঙ্গ সংবাদেই লাগাতার খবর প্রকাশিত হতেই সেচ দপ্তর পিঠ বাঁচাতে নিউ জলপাইগুড়ি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো ওই অভিযোগে কারও নাম দেয়নি। যে কারণে নির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে মামলাই করতে পারেনি শিলিগুড়ি পুলিশ। এরপর আরও সুযোগ পেয়ে যায় জমির কারবারিরা। একের পর এক সরকারি জমি হয় স্ট্যাম্প পেপারে লিখে নয়তো বিএল অ্যান্ড এলআরও অফিস থেকে ভুয়ো নথি নিয়ে এসে বিক্রি করে দিয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে নদীর চরেরও নকল কাগজ তৈরি করে ফেলেছে অভিযুক্তরা। এরপর দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা কাঠা প্রতি জমিগুলি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
আগে সেচ দপ্তরের জমি, সরকারি খাসজমি, নদীর চর দখল হলেও এখন নতুন করে জলাভূমিও বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপরেও প্রভাব পরছে। এই বিষয়ে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ঐরাবতের কর্ণধার অভিযান সাহা বলেন, ‘পোড়াঝাড়ে নদীর চর দখলের পর এবার জলাভূমির ওপর নজর পড়েছে মাফিয়াদের। আমরা তথ্য জানার আইনে আবেদন করেছি। মামলার পথে যাব আমরা।’