উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। ২৫ এপ্রিল হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। টানা দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। খুব একটা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। আগে থেকেই তাঁর সিওপিডি-র সমস্যা ছিল। দীর্ঘ রোগভোগের পর সোমবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য মহলে। ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম সমরেশ মজুমদারের। এখানেই কেটেছে ছেলেবেলা। বাঙালি হৃদয়কে আন্দোলিত করা এই সাহিত্যিকের শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। তারপর ১৯৬০ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। মাস্টার্স করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কাজ করতেন সংবাদমাধ্যমে। সাহিত্যের পাশাপাশি গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকথা ঠাঁই পেয়েছে তাঁর লেখায়।
তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। অনিমেষ-মাধবীলতার মতো একাধিক বহু চর্চিত চরিত্র প্রাণ পেয়েছে তাঁর কলমে। সাহিত্য জগতে অবদানের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে। এছাড়াও বঙ্কিম পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারের মতো পুরস্কারও ছিল তাঁর ঝুলিতে।
এদিকে, সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল: দৌড়, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, উত্তরাধিকার, অর্জুন সমগ্র, সাতকাহন ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।’ সাহিত্যিকের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।