অমিতকুমার রায়, হলদিবাড়ি : মানসম্মান ধুলোয় গড়াগড়ি দেওয়ায় এবারে নিঃশব্দ প্রতিবাদ। আর তাতেই কাজের কাজ। সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক হইচই। দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস। কারও প্যান্টের ঘের এতটাই বেশি যে, মাঝেমধ্যেই তা কোমর থেকে খুলে পড়ছে, কারও ফুলপ্যান্ট যেন বারমুডা। কারও কারও জামার কথা না বলাই ভালো। হাতা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের চেয়ে পাঁচসাত ইঞ্চি বেশি ঝুলে লতপত করছে। লজ্জায় অনেকেই সেই পোশাক পরতে পারছে না। পরলেও হলদিবাড়ির হেমকুমারী উচ্চবিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এই পোশাক নিয়ে রীতিমতো হাসির খোরাক হতে হচ্ছে। তাই আর নয়! পড়ুয়ারা পোশাক-প্রতিবাদে নামল! কাকতাড়ুয়া স্টাইলে।
স্কুলের গেটের সামনে তাদের এহেন প্রতিবাদ দেখে সবার চোখ কপালে। সহকারী প্রধান শিক্ষককে ঘিরে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখালেন। দ্রুত সঠিক মাপের পোশাক বিতরণের দাবি জানানো হল। পাশাপাশি, নিম্নমানের কাপড় দিয়ে পড়ুয়াদের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানানো হল। সমস্ত সমস্যা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বড়সড়ো আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ অবশ্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
হেমকুমারী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার রায় বললেন, ‘বুধবার পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির প্রায় ২০০ পড়ুয়ার মধ্যে পোশাক বিতরণ করা হয়েছিল। পরে সমস্যার বিষয়টি সামনে আসে। অভিভাবকদের তরফে পোশাকের মাপের পাশাপাশি কাপড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কাপড়ের মানের বিষয়ে আমরা পোশাক তৈরির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। দপ্তরের তরফে তাদের যে কাপড় দেওয়া হয়েছে তা দিয়েই পোশাক তৈরি করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে দপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ পোশাক তৈরির দায়িত্বে থাকা অমর সংঘ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী মিনতি রায় বলেন, ‘নির্দিষ্ট মাপে কাপড় কেটে জেলা থেকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়। সেটি দিয়েই আমরা পড়ুয়াদের জন্য পোশাক সেলাই করে সেগুলি স্কুলে পৌঁছে দিয়েছি। সমস্যা হওয়ায় পোশাকগুলি ফেরত নিয়ে সেগুলি ঠিক করে দেওয়া হবে।’নিঃশব্দে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী পড়ুয়াদের দলে এদিন নানা ক্লাসের পড়ুয়ারা শামিল ছিল।
পঞ্চম শ্রেণির নয়নউদ্দিন প্রামাণিক, মোকসেদুল সরকাররা জানাল, স্কুলের তরফে দেওয়া পোশাক গাযে চাপালে তাদের নিজেদের কাকতাড়ুয়া বলে মনে হচ্ছে। কাপড়ের মানও ভালো নয়। তাই তারা বাধ্য হয়ে ওই পোশাক ফিরিয়ে দিয়েছে। অভিভাবক মীনাক্ষী রায় বললেন, ‘আমার ছেলের জন্য যে মাপে প্যান্ট তৈরি করা হযেছে, পরতে গেলে তা বারে বারে খুলে পড়ে যাচ্ছে। যে মানের কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করা হযেছে তা গরমের দিনে ব্যবহার করা খুবই সমস্যার।’ অভিভাবক জাহিদুল হক সরকার বললেন, ‘আমার ছেলের জন্য যে মাপে জামা তৈরি করা হযেছে সেটি বরং আমার গায়ে ভালোভাবে আঁটছে।’ জবেদ আলি সরকার, নুরুদ্দিন মহম্মদের মতো অভিভাবকদের অভিযোগ, ‘একেই তো শিক্ষাবর্ষের শেষে পোশাক বিতরণ করা হচ্ছে। ঠিক মাপে পোশাক তৈরি তো হয়ইনি, কাপড়ের মানও খারাপ। এই যেমন-তেমন মনোভাবে পড়ুয়াদের জন্য পোশাক তৈরি করা তাদের মানসিকতায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য।’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত। কাপড়ের মানের বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, তাদের কাছে যে কাপড় পাঠানো হযেছিল তা দিযেই পড়ুয়াদের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। পোশাক তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে পোশাকগুলিকে ঠিক মাপমতো করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।