উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ফিটনেস সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করে সুস্থ থাকতে চান অনেকেই। কিন্তু জিমে যাওয়ার নাম শুনলেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। যারা দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের ব্যায়াম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁদের শরীরও আর আগের মতো করে সাড়া দিচ্ছে না গতে বাঁধা ব্যায়ামের রুটিনে, এই সমস্ত সমস্যার সহজ সমাধান হচ্ছে পিলাটিজ। মেয়েদের শরীরকে নির্মেদ ও নমনীয় রাখতে পিলাটিজ আদর্শ। তার চেয়েও বড়ো সুবিধে হচ্ছে, কেবল একটি ব্যায়ামের ম্যাট থাকলেই আপনি এই এক্সারসাইজটি করতে পারবেন, কোনও বাড়তি উপকরণের প্রয়োজনই পড়বে না! আপনার শরীরের ওজনের সাহায্যেই সম্পন্ন হবে ওয়ার্কআউট৷ তবে কিছু কিছু পিলাটিজ প্রশিক্ষক নানা ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্যও নিয়ে থাকেন, বিশেষ করে অ্যাডভান্সড লেভেলের পিলাটিজ অভ্যাস করানোর জন্য।
কারা পিলাটিজ করতে পারেন?
কোমরে বা পিঠে ব্যথার সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরাও পেশাদারের পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে পিলাটিজ় শুরু করে দেখুন, কিছুদিনের মধ্যেই আরাম পাবেন৷ যাঁরা দীর্ঘ সময় সিটে বসে কাজ করতে বাধ্য হন, তাঁরা এই ব্যায়াম করতে পারেন স্বচ্ছন্দে৷ যাঁরা খেলাধুলো করেন, তাঁরাও শক্তি, স্ট্যামিনা ও এনডুওরেন্স বাড়ানোর জন্য পিলাটিজ় করলে উপকার পাবেন৷ যাঁরা সাঁতার কাটেন, দৌড়োন, ব্যাডমিন্টন বা টেনিস খেলেন, তাঁরাও পিলাটিজ় শুরু করতে পারেন– এর ফলে বাড়বে আপনার পেশির শক্তি ও ফ্লেক্সিবিলিটি, চট করে আঘাত লাগবে না৷ এই বিশেষ ওয়ার্কআউটটিতে আপনার পুরো শরীর ইনভলভড হবে, ফলে সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রেও পিলাটিজ়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
ব্যায়ামের রুটিনে বৈচিত্র্য আনতে সাহায্য করে পিলাটিজ
নিয়মিত একই ধরনের ব্যায়াম করে গেলে আপনার ওজন কমার হারে ভাটার টান দেখা দেবে৷ তাই ব্যায়ামের রুটিনে বৈচিত্র্য আনতে চাইলে কিছুদিনের জন্য পিলাটিজ় অভ্যেস করে দেখা যেতে পারে৷ এর ফলে আপনার কোর মাসল ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং কোর শক্তিশালী হলে বাড়ির কাজ থেকে আরম্ভ করে অফিসের চাপ সবটাই আপনি হেলায় সামলাতে পারবেন।
পিলাটিজ কার্ল
কয়েকটি সহজ পিলাটিজ এক্সারসাইজ়ের নমুনা:
পিলাটিজ কার্ল: আপনার এক্সারসাইজ় ম্যাটের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন৷ মুখ থাকবে সিলিংয়ের দিকে, পা ভাঁজ করে নিন, পায়ের পাতা থাকবে ম্যাটের উপর৷ হাত দুটো রাখুন শরীরের দু’ পাশে, পায়ের মতো হাতের পাতাও থাকবে মাটির উপর৷ এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠটা মাটি থেকে তুলুন, চিবুক থাকবে বুকের উপর৷ যতটা উঠলে পেটে চাপ পড়ে ততটা উঠে নিঃশ্বাস ধরে থাকুন এক মুহূর্তের জন্য, তার পর ফের ফিরে যান আগের পজ়িশনে৷
পিলাটিজ অভ্যাস করলে পশ্চার ভালো হয়
দ্য হানড্রেড: ম্যাটের উপর টানটান হয়ে শুয়ে হাত, ঘাড় আর কাঁধ মাটির উপর থেকে তুলে নিন, পা ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন৷ আপনার হাতের পাতা থাকবে মাটির দিকে৷ এবার পা সোজা খুলে দিন, ৪৫ ডিগ্রি কোণে সেটা মাটি থেকে উপরে তুলে হোল্ড করে রাখুন৷ নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে, ৫ বার শ্বাস নেওয়া পর্যন্ত এইভাবে ধরে রাখুন৷ ধরে রাখার সময়টায় হাতটা সামান্য উপরে তুলুন, ফের নিচে নিয়ে যান, কখনওই কিন্তু হাত মাটিতে স্পর্শ করবেন না৷ এইভাবে ১০ কাউন্ট করুন।
পিলাটিজ রোল আপ: পিঠ সোজা করে শুয়ে পড়ুন আপনার এক্সারসাইজ় ম্যাটের উপর৷ হাত দুটো সোজা করে তুলে দিন মাথার উপর৷ এবার সোজা উঠে বসুন, হাত চলে আসবে সামনের দিকে, পা পর্যন্ত নিয়ে যান৷ তার পর আবার ফিরে যান গোড়ার পজ়িশনে৷
কোমরে ব্যথা থাকলে তা কমতে আরম্ভ করে
টিজ়ার টু: পিঠ সোজা করে শুয়ে পড়ুন আপনার এক্সারসাইজ় ম্যাটের উপর৷ পা দুটো জোড়া করে তুলতে আরম্ভ করুন ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে, সেই সঙ্গে কাঁধ, ঘাড় আর পিঠও উঠবে ম্যাট থেকে৷ হাত সামনে রাখুন৷ আপনার পুরো শরীরটা যেন ভি আকৃতির হয়ে যায়৷ এইভাবে যদি পা মাটির কাছাকাছি নিয়ে যেতে ও ফিরিয়ে আনতে পারেন, তা হলে আপনার কোর মাসলের উপর আরও বেশি চাপ পড়বে।
কোর মাসলের শক্তি বাড়ে পিলাটিজ অভ্যেস করলে
পিলাটিজ প্ল্যাঙ্ক ও পুশ আপ: প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান ম্যাটের উপর। কোমর থেকে শরীরটা ভাঁজ করে হাত দুটো মাটির উপর নিয়ে আসুন৷ হাত দুটো এগিয়ে নিয়ে যান ক্রমশ, পুরো বডি স্ট্রেচ করে একটি পুশ আপ করুন৷ তার পর হাই প্ল্যাঙ্ক, প্ল্যাঙ্ক করলে প্রথম সেট শেষ হবে৷ ফের ফিরে যান দাঁড়ানো অবস্থায়৷ এইভাবে ৩-৫টি রিপিটেশন অভ্যেস করতে হবে৷
সিঙ্গল স্ট্রেট লেগ স্ট্রেচ: ম্যাটের উপর সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। কোমর, পিঠ, ঘাড় তুলুন ম্যাট থেকে, পা সোজা রেখে তুলুন যতটা সম্ভব৷ ডান পা সিলিংয়ের দিকে তুলে মুখের যতটা কাছে আনতে পারেন নিয়ে আসুন, বাঁ পা আগের অবস্থানেই থাকবে৷ ডান পায়ের গোছের কাছটা আপনি হাত দিয়ে ধরে রাখবেন৷ দু’বার বাউন্স করে পা মুখের যতটা কাছে সম্ভব নিয়ে আসুন৷ তার পর বাঁ পা দিয়ে রিপিট করুন৷ এইভাবে পাঁচটি সেট করতে হবে৷
ডাবল স্ট্রেট লেগ স্ট্রেচ: সোজা হয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন৷ ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে ঘাড়টা মাটির উপর তুলতে হবে৷ দুটো পা সোজা করে সিলিংয়ের দিকে তুলুন, তার পর নামিয়ে আনবেন, কিন্তু মাটি স্পর্শ করবেন না৷ এইভাবে পাঁচবার রিপিট করতে হবে।
ব্যায়ামের একঘেয়েমিতে পরিবর্তন আনুন
শোল্ডার ব্রিজ: ম্যাটে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন৷ আপনার দু’টি হাত থাকবে শরীরের দুই পাশে৷ ব্যালেন্সের জন্য পায়ের কাছে রাখুন এক্সারসাইজ়ের বল, পা দু’টি তুলে দিন এই বলের উপর৷ বল না থাকলে পা ভাঁজ করে নিন হাঁটু থেকে৷ তার পর কোমর ও নিতম্ব তুলুন সিলিংয়ের দিকে৷ মোটামুটি ৪৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি হবে একটি৷ এবার একটি করে পা সিলিংয়ের দিকে তুলতে হবে, নামিয়ে আনতে হবে বলের/ মাটির উপর। পাঁচ বার হওয়ার পর পা বদলে নিন। একইভাবে পাঁচটি রিপিটেশন করুন৷ কোমর নামিয়ে আনুন ম্যাটের উপর।
রোল লাইক আ বল: ম্যাটের উপর বসুন, পা দুটো ভাঁজ করে বুকের কাছে রাখুন৷ হাতটা জড়িয়ে নিন পায়ের উপর দিয়ে৷ এবার টেল বোনের উপর ভর দিয়ে রোল করুন শরীরটা, আবার উঠে আসুন৷ কোনও পরিস্থিতিতেই আপনার পা মাটি স্পর্শ করবে না৷ এইভাবে দশটি রিপিটেশন করুন।
পিলাটিজ বাড়ায় সহ্যক্ষমতা
ডাবল লেগ কিক: ম্যাটের উপর উলটো হয়ে শুয়ে পড়ুন, আপনার একদিকের গাল রাখুন মাটির উপর৷ হাত দুটো কোমরের উপর ভাঁজ করে রাখবেন, কনুই থাকবে মাটিতে৷ পা দুটো ভাঁজ করে নিয়ে আসুন আপনার নিতম্ব পর্যন্ত, এইভাবে দু’-তিনবার আনার পর পুরো শরীরটা একবার স্ট্রেচ করে নিন৷ তারপর অন্য গাল মাটিতে রাখুন ও এইভাবে পুরো পদ্ধতিটা রিপিট করুন।