নাগরাকাটা: নাগরাকাটায় সিপিএমের সভায় উপচে পড়া ভিড়। পঞ্চায়েতের আগে রবিবার নাগরাকাটার আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে কর্মী সভার ডাক দেয় সিপিএম। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কর্মী সভা থেকে ঘাসফুল ও পদ্ম দুই শিবিরকে একই সুরে বেঁধেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘অমিত শাহ বলছে ৩৫ লোকসভার আসন চাই। তৃণমূল বলছে ২৪০ বিধানসভার আস। মাঝ খান থেকে মানুষের অধিকারের কেন্দ্রবিন্দু গ্রামসভা কোথায় গেলো? ওঁরা মন্ত্রী হতে চায়। আমরা মানুষের কথা বলছি। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই শাসক দলই পঞ্চায়েত ভোট করাতে চায় না। মানুষ কিন্তু জোট বাঁধছে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। চ্যালেঞ্জ নাও। দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা দাও।’ বহুদিন পর এদিনের সভায় কর্মী সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় দেখে দৃশ্যতই উচ্ছসিত এক সময়ের লাল দূর্গ নাগরাকাটার সিপিএম নেতৃত্ব।
এদিন চা বাগানের শ্রমিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সেলিম তৃণমূল ও বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো এখানে এসে তামাশা করে গেলেন। মালিকরাও মিটিং করেছেন। তারপরই দেবপাড়া বন্ধ হলো কেন? দ্রুত ওই বাগান খুলতে হবে। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনতে হবে। লোক দেখানো বারবার অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধিতে কারো সায় নেই। ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন চলছে ও চলবে।
গোরু পাচার কাণ্ড নিয়েও সেলিম তৃণমূল ও বিজেপিকে একই পংক্তিতে বসিয়েছেন। তাঁর সংযোজন, ‘আমরা আগেই বলেছি এই ধরনের আন্তর্জাতিক পাচার কেন্দ্রের ও রাজ্যের শাসক দলের উঁচু পর্যায়ের লোকজন যুক্ত না থাকলে সম্ভব নয়। বিএসএফ ও রাজ্য পুলিশের একটা অংশের যোগসাজশ না থাকলে টিএমসি ও বিজেপি গরু পাচার করতে পারতো না।’ ডিএ মামলার শুনানিতে কোর্টে বারবার তারিখ বদল নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম বলেন, ‘যখন খেলা হবে বলা হয়েছিলো তখন তো শুভেন্দুও খেলোয়াড় ছিলো। ওঁনার ডিএনএ তে তৃণমূল।’
পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষনা না হওয়ার পেছনেও তৃণমূল ও বিজেপির বোঝাপড়া দেখতে পেয়েছেন সেলিম। বলেছেন, ‘ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য মমতার কথায় শুভেন্দু অধিকারী কোর্টে গিয়েছিলেন। কল্কে না পেয়ে এখন দু পক্ষই জাতিগত ইস্যুতে গোলমাল বাঁধানোর অপচেষ্টায় রত। যাতে যে করেই হোক ভোট পেছায়। আর তৃণমূল তো কোন ভোটই চায় না। স্কুল ভোট বন্ধ। কলেজের ছাত্র সংসদের ভোট বন্ধ। সমবায়ের ভোট বন্ধ। যে ভোট করে সেখানে লুঠ চলে। এমনকি নিজদের নকল ভোটেও লুঠের ছড়াছড়ি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনজোয়ার যাত্রা যেখান দিয়েই যাচ্ছে তারপরই সেখান থেকে মানুষ লাল ঝান্ডার তলায় আসছেন বলে সেলিমের দাবি।’
পাহাড় ইস্যুতে সেলিমের বক্তব্য, এটা নিয়ে চর্চা কোথায়? মোদী লোকসভার আলোচনা নষ্ট করে দিয়েছেন। মমতা বিধানসভার। আর তৃণমূল গ্রাম সভার। পাহাড়ের যত অংশীদার বা সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরা রয়েছেন তাঁদের সাথে সরকার কথা বলে সমাধান সূত্র বের করুক। তার আগে কেন্দ্র আলোচনার ভিত্তি তৈরি করুক। আসলে ওঁদের রাজনৈতিক কোন সদিচ্ছাই নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ হচ্ছে বলেও সেলিম এদিন অভিযোগ করেন।