সানি সরকার, শিলিগুড়িঃ তিস্তার হড়পায় করোনেশন সেতুর ত্রুটি এখনও ধরা না পড়লেও সেবকের রেলসেতুর ক্ষতি হয়েছে। পৃথক দুটি বিশেষজ্ঞ দল সেতু দুটি পরীক্ষা করে এই রিপোর্টই দিয়েছে। রেল সেতুর পাঁচ নম্বর পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুর ওপর ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। এখনও পর্যন্ত করোনেশন সেতুতে কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা না পড়লেও নজরদারি, যান নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। উত্তর সিকিমের লোনাক লেক বিপর্যয়ে ত্রাস হয়ে উঠেছিল তিস্তা। ৪ অক্টোবর ভয়ঙ্করী তিস্তার জলচ্ছ্বাস সিকিম তো বটেই, কার্যত লণ্ডভণ্ড করে দেয় বাংলার নদীপাড়ের এলাকাগুলিকেও। ওই ক্ষত এখনও টাটকা।
লোনাক বিপর্যয়ের জেরে করোনেশন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিশেষ নজর দিল জেলা প্রশাসন। খরগপুর আইআইটির একটি বিশেষজ্ঞ দল রবিবার থেকে শুরু করল সেতুটির অবস্থা খতিয়ে দেখার কাজ। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দলটি এদিন করোনেশনের বিশেষ কয়েকটি অংশের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এই কাজ আরও কয়েকদিন ধরে চলবে। দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক ডঃ প্রীতি গোয়েল বলেন, খড়গপুর আইআইটির একটি দল সেতুটির বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখছে। কোনও ক্ষতি হয়নি বলে দলটি জানিয়েছে। তবে সেতুটিকে শক্তপোক্ত করার যে কাজ আমরা অনেক আগে শুরু করেছিলাম, তা চলবে। উল্লেখ্য, বর্ষার আগে খড়গপুর আইআইটির একটি বিশেষজ্ঞ দল করোনেশন সেতু পরীক্ষা করে কয়েকটি ক্ষেত্রে কাজের পরামর্শ দিয়েছিল। ওই পরামর্শ অনুসারে কী কী কাজ হয়েছে, সেই কাজের মান কেমন- এই বিষযগুলিও বিশেষজ্ঞ দলটি দেখবে বলে জানা গিয়েছে।
১০ নম্বর জাতীয সড়কের অনেকটাই গিলে খেয়েছে তিস্তা। ফলে এখনও শিলিগুড়ি ও সিকিমের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। এমন পরিস্থিতিতে লাভা, গরুবাথান রুট ধরে সিকিম ও কালিম্পংয়ের সঙ্গে শিলিগুড়ির সড়ক ব্যবস্থা সচল রয়েছে। পন্যবাহী গাড়িগুলিকে গজলডোবা হযে ঘুরপথে চালানো হলেও প্রত্যেকদিন শয়ে শয়ে গাড়ি করোনেশন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। পুজো পর্যটনের ঢাকেও কার্যত কাঠি পড়ে গিয়েছে। পুজো যত এগিযে আসবে ততই ডুযার্স ও কালিম্পংয়ের পথে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে গাড়ির সংখ্যা আরও কয়েক গুন বেড়ে যাবে। এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নজরদারি রাখার পাশাপাশি যান নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের।
এদিকে, ৪ অক্টোবর তিস্তার জলচ্ছ্বাসে ভীত নড়েছে সেবক রেলসেতুরও। ওইদিন সকালে জলের লেভেল প্রায সেতু ছুঁয়ে ফেলেছিল। এরপরেই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল সেতুটির পরিকাঠামো অবস্থান খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েকদিন আগে রেলের একটি বিশেষজ্ঞ দল সেতুটির বর্তমান অবস্থান খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট দিয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। ওই রিপোর্টে সেতুর পাঁচ নম্বর পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়। কিছু কাজের পাশাপাশি ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছে দলটি। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ঘটনার পরই সেতুটির পরীক্ষা করা হয়েছিল। একটি বিশেষজ্ঞ দল দিযে পরীক্ষা করা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে ওখানে ট্রেনের গতি নিযন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।