প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ‘পাওয়ার’ আছেন পাওয়ারেই। আর তাঁকে ঘিরে কার্যত ঘন ঘন সমন্বয় সাধন জনিত ‘পাওয়ার কাটে’ জেরবার বিরোধী জোট শিবির – ইন্ডিয়া। বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার, যখন নিজের ‘গড়’ তথা নির্বাচনী কেন্দ্র বারামতীতে দাঁড়িয়ে শরদ পাওয়ার দাবি করেছেন তাঁর ভাইপো অজিত এখনও এনসিপি-তেই আছেন৷ ভাইপোর সঙ্গে তাঁর মতান্তরের ফলে এনসিপি-তে যে ভাঙন ধরেছে সেটাও অস্বীকার করেন শরদ পাওয়ার৷
বলে রাখা প্রয়োজন, দুদিন আগে ঠিক একই দাবি করেছিলেন শরদ কন্যা ও সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে৷ এদিন প্রকারান্তরে সুপ্রিয়ার দাবিকেই সমর্থন করে শরদ পাওয়ার বলেন, ‘অজিত যে এখনও আমাদের দলের নেতা সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ কয়েকজন নেতা আলাদা অবস্থান নিয়েছেন৷ গণতন্ত্রে এটা হতেই পারে৷’ মেয়ে সুপ্রিয়ার সুরেই নিজেদের দলের বিভাজন অস্বীকার করে শরদ পাওয়ারের সংযোজন, ‘একটি দলে জাতীয় পর্যায়ে বিভাজন হলে তাকে ভাঙন হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে৷ এই ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি।’ এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অজিত পাওয়ার প্রসঙ্গে নিজের মত পাল্টে শরদ পাওয়ারের দাবি, ‘আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে৷ যারা অন্য পথে চলে গিয়েছে তারা কোনওদিন আমাদের দলের নেতা হতে পারবে না৷’ এনসিপি সুপ্রিমোর এই মন্তব্য এবং পাল্টা মন্তব্য শোনার পরে ইন্ডিয়া শিবিরের এক প্রথম সারির সাংসদের প্রতিক্রিয়া, ‘একটু সময় দিন। ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে৷’ ইন্ডিয়া জোটের আরেক সদস্য তীব্র কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘এই যদি পাওয়ার পলিটিক্সের নমুনা হয়, এর চেয়ে লোডশেডিং ঢের ভালো।’
উল্লেখ্য এই নিয়ে এক মাসে তিন বার ‘পাওয়ার ক্রাইসিস’ দেখা গেল মহারাষ্ট্রে। এর আগে ১ আগস্ট পুণেতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে শরদের উপস্থিতি, মোদির সঙ্গে হাল্কা হাসিঠাট্টা, শেষে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর পিঠ চাপড়ে দেওয়া৷ পরের দিনই সংসদে বিরোধী বৈঠকে শামিল হন শরদ। এর পর ১৩ আগস্ট রাতে পুণেতে জনৈক শিল্পপতির বাসভবনে দলত্যাগী ভাইপো এবং মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন এনসিপি সুপ্রিমো। পরে তা অস্বীকারও করেন। সবশেষে শুক্রবার ২৫ আগস্ট বারামতীতে ভাইপোর সঙ্গে যাবতীয় মতান্তরের কথা অস্বীকার করার পাশাপাশি তাকে এনসিপি-রই নেতা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন পাওয়ার। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফের অবস্থান পাল্টে করেছেন অজিত পাওয়ারের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরির মরিয়া চেষ্টা৷ ‘মারাঠা স্ট্রং ম্যানে’র এহেন ভোলবদলে রীতিমত অস্বস্তিতে ২৬টি বিজেপি বিরোধী দলের জোট ইন্ডিয়া শিবির৷ বিজেপি বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে নাকি শরদ পাওয়ারকে আগে নিরস্ত করা হবে, ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না ইন্ডিয়া শিবিরের প্রথম সারির সাংসদরা৷
ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি সাংসদদের অনেকের কাছেই শরদ পাওয়ারের এহেন ‘দ্বিমুখী’ আচরণ বোধগম্য না হলেও রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি নিজের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের দল এবং ইন্ডিয়া জোট-র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছেন পাওয়ার৷ এদিকে নিজের ঘর বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে দলত্যাগী ভাইপোকে কাছে টানতে চাইছেন৷ এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তিনি নিজের মন্তব্য অস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন ইন্ডিয়া শিবিরের নেতাদের চাপের মুখে৷ অজিত পাওয়ারের বিষয়ে তাঁর ‘নমনীয়তা’ ইন্ডিয়া জোটে সমস্যার সৃষ্টি করছে, অবিলম্বে তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করলে ভালো হয়, ইন্ডিয়া জোটের এক শীর্ষ কড়া বার্তার পরেই ফের নিজের অবস্থান পালটে ফেলেছেন পাওয়ার, দাবি বিশ্বস্ত সূত্রের৷
এখানেই সামনে আসছে ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’র ভূমিকা এবং শরদ পাওয়ার কন্য সুপ্রিয়া সুলের বিবৃতি৷ বুধবার মুম্বইয়ে ‘মহা বিকাশ আগাড়ি’র একটি বৈঠকে শরদ পাওয়ার, সুপ্রিয়া সুলে, উদ্ধব ঠাকরে, সঞ্জয় রাউতের মত নেতারা হাজির ছিলেন৷ ওই বৈঠকের প্রধান আলোচ্যসূচি ছিল ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ে নির্ধারিত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠককে সর্বোতোভাবে সাফল্যমন্ডিত করে তোলা৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুম্বাইয়ে সমবেত হওয়া ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিরা কোন হোটেলে থাকবেন, তাদের দেখভাল কী ভাবে করা হবে থেকে শুরু করে মুম্বই সামিটের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনার সময়ে সর্বক্ষণ উপস্থিত ছিলেন শরদ পাওয়ার নিজে৷
সূত্রের দাবি, বৈঠক পর্ব সফল করার উদ্দেশ্যে তিনি উদ্ধব ঠাকরেকে বেশ কিছু পরামর্শ দেন৷ উদ্ধবও জানান, তিনি শরদ পাওয়ারের পরামর্শ মেনেই কাজ করছেন৷ মুম্বাইয়ের বৈঠককে সর্বাত্মক সফল করতে হবে, উদ্ধবের সামনেই জানান শরদ পাওয়ার৷ সূত্রের দাবি, এর পরেই দিল্লিতে বসে থাকা ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি এক বর্ষীয়ান সাংসদের কাছে সুপ্রিয়া সুলের ফোন যায় এবং সংশ্লিষ্ট সাংসদকে সুপ্রিয়া জানান, ‘সব ঠিক আছে, মুম্বইয়ের বৈঠক সুপারহিট হবে৷’ শরদ কন্যার এই দাবির পরেও মারাঠা স্ট্রং ম্যানের শুক্রবারের অবস্থানকে ফের আতস কাঁচের তলায় ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিদের একাংশ৷ যাবতীয় ঘটনাপ্রবাহ দেখার পরে শুক্রবার ইন্ডিয়া শিবিরের এক সাংসদের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া- ‘৩১ আগস্ট পর্যন্ত একটাই নীতি – ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ৷ যা বলার মুম্বই সামিটের পরে বলা হবে।’