শিবমন্দির: শিবমন্দিরের সূর্যসেনপল্লিতে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে লেখা ‘ফ্ল্যাট ফর সেল’। এদিকে, মেডিকেল মোড়ের বাসিন্দা শিবানন্দ পাল ফ্ল্যাট খুঁজছেন। ওই বিজ্ঞাপন দেখে শিবানন্দ মোবাইল বের করে ফোন ডায়াল করতে গিয়েই দেখেন ওই নম্বরটা তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি অভিজিৎ পালের(রিন্টু)। ‘আরে রিন্টু আবার প্রোমোটিংয়ে নামল কবে থেকে!’ পরিচিত হওয়ায় সরাসরি অভিজিৎকে ফোন না করে দ্বিতীয় নম্বরটি ডায়াল করতে যান শিবানন্দ। নম্বর ডায়াল করতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। সেটা তো আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান যূথিকা রায় (খাসনবিশ)-এর নম্বর!
তাহলে তৃণমূলের পদাধিকারীরা এখন প্রোমোটিং করছেন? শিবানন্দর মতোই এই প্রশ্ন এখন সকলেরই। একই অবস্থা মাস্টারপাড়ায়। সেখানেও একটি ডেভেলপার সংস্থার ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তাতে লেখা নম্বরে ডায়াল করে দেখা গেল একটি নম্বর তৃণমূলের ব্লক সভাপতির, অন্যটি সদরের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা তৃণমূলের স্বপ্না নিয়োগীর। এসব দেখেশুনে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদেরই চক্ষু চড়কগাছ। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী একজন প্রধান কি এভাবে প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা করতে পারেন? সরকারি আমলারাই বলছেন, ‘একেবারেই পারেন না। পঞ্চায়েত আইনে স্পষ্ট বলা রয়েছে জেলা পরিষদ বা মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অন্য কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না।’
এ তো গেল সরকারি নিয়ম। আর দলের নির্দেশ? তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, ঠিকাদার, প্রোমোটার, জমি-বালি মাফিয়া কেউই দলের পদে থাকতে পারবেন না। তাহলে এসব হচ্ছে কীভাবে? কোনও আড়াল-আবডাল তো নয়, সরাসরি নিজেদের ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছেন ব্লক সভাপতি এমনকি একজন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষেরও অভিষেকের নির্দেশ মনে রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘শিবমন্দিরে এভাবে দলের নেতা বা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রোমোটিং করছেন বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যা বলার বলব।’
দলের শুদ্ধিকরণ করতে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক একাধিকবার বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, প্রোমোটার, জমির দালাল, বালি, কয়লা পাচারকারী সহ বিভিন্ন কাজকর্মে যুক্ত নেতা-নেত্রীকে দলের কোনও পদে বসানো যাবে না। কিন্তু শিলিগুড়িতে যে এই নির্দেশকে নেতা-নেত্রীরা মান্যতা দেন না সেটা অনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এখানে শাসকদলের এক ব্লক সভাপতি বেআইনি জমির কারবারে বহুদিন ধরেই যুক্ত। ইদানীং তিনি মাদক কারবারিদের থেকেও নাকি তোলাবাজি করছেন। দলের বিভিন্ন পদে থেকেও জমির কারবার করেন এমন নেতা-নেত্রীর সংখ্যা তো হাতে গুনে শেষ করা যাবে না।
আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবমন্দিরের সূর্যসেনপল্লি, মাস্টারপাড়ায় একাধিক বহুতল আবাসন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। প্রত্যেকটি আবাসনেই তৃণমূলের কোনও না কোনও পদাধিকারীর নামে কাজ হচ্ছে। তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বই বলছেন যে দলের কেউ এসব ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারবেন না। অথচ রীতিমতো নেতা-নেত্রীদের ফোন নম্বর দিয়ে সাইনবোর্ড বানিয়ে ফ্ল্যাট কেনার জন্য যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
সূর্যসেনপল্লিতে একটি প্রোজেক্টে যে বিল্ডার্সের নাম রয়েছে সেখানে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির পাশাপাশি আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের মোবাইল নম্বর দেওয়া রয়েছে। সরকারি আমলারা বলছেন আইনবিরুদ্ধ। অথচ, আঠারোখাইয়ের প্রধান যূথিকা রায় (খাসনবিশ)-এর সঙ্গে এব্যাপারে কথা বলতে গেলে পালটা বলেছেন, ‘আপনি আইন জানেন না বলেই এসব কথা বলছেন। আগে আইন জানুন। এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা। ব্যবসা করতেই পারি।’