দেওয়ানহাট: আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দশম ওয়ার্ল্ড স্ট্রেন্থ লিফটিং অ্যান্ড আইবিপি চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতায় ৫৬ কেজি জুনিয়ার মেন বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বলরামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকাডরা গ্রামের যুবক শ্রীবাস দাস। কিন্তু অর্থাভাবে এতে তাঁর অংশগ্রহণ এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। প্রয়োজনীয় প্রায় ৩০ হাজার টাকার জন্য তিনি ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে দরবার করেছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েও তা হারাতে বসায় মনভার শ্রীবাস ও তাঁর পরিবারের।
শ্রীবাসের বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস একজন কৃষি শ্রমিক। ২০১৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করে বন্ধ হয়ে যায় শ্রীবাসের পড়াশোনা। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তিনি বাড়ির পাশেই হরিমন্দির বাজারে মোটর মেকানিকের কাজ শুরু করেন। আর এরমধ্যেই শরীরচর্চা করতে করতে পাওয়ার লিফটিং ও স্ট্রেন্থ লিফটিংয়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ জন্মায়। এই সময় তিনি স্থানীয় বলরামপুর মুরারিমোহন ও মালতীদেবী ব্যায়াম মন্দিরের সংস্পর্শে আসেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাঁকাতে হয়নি। শ্রীবাস ২০২২ সালে জেলাস্তরে পাওয়ার লিফটিংয়ে দ্বিতীয়, স্ট্রেন্থে তৃতীয় হওয়ার পাশাপাশি গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্তরের পাওয়ার লিফটিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। চলতি বছর স্ট্রেন্থে জেলাস্তরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি রাজ্যস্তরে দ্বিতীয় হন। এছাড়াও জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে এসেছে তাঁর একের পর এক সাফল্য।
এরকম প্রতিভাবান একজন ক্রীড়াবিদকে দশম ওয়ার্ল্ড স্ট্রেন্থ লিফটিং অ্যান্ড আইবিপি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নির্বাচন করে ইন্ডিয়ান স্ট্রেন্থ লিফটিং ফেডারেশন। একইসঙ্গে ওই সংস্থা জানিয়ে দেয় প্রতিযোগিতায় শ্রীবাসের অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ৩০ হাজার টাকা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আর এতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শ্রীবাস ও তাঁর পরিবারের। তারপরও স্বপ্নপূরণের তাগিদে তাঁরা স্থানীয় প্রশাসন সহ বিভিন্ন মহলে দরবার করেছেন। কিন্তু যেটুকু আশ্বাস মিলেছে তা সামান্য বলে জানালেন শ্রীবাস। তাঁর কথায়, ‘প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেলে নিজের সবটুকু দিয়ে সাফল্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আমি কিন্তু টাকার জোগাড় না হওয়ায় আমার হয়তো যাওয়াই হবেনা। শ্রীবাসের বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমার সামর্থ্য নেই। তাই সকলের কাছে করজোরে অনুরোধ, আপনারা সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তাতে ও হায়দরাবাদ যেতে পারবে।’ কিন্তু আদৌ কি তা হবে, নাকি স্বপ্নভঙ্গের বেদনাকে সঙ্গী করেই কাটবে শ্রীবাসের দিন তা সম্পূর্ণ অজানা।