ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: ছেলেবেলায় হাতে উঠে এসেছিল টেবিল টেনিসের ব্যাট। কিছুদিন খেলাধুলো চালিয়ে গেলেও ছোট থেকেই শিলিগুড়ির (Siliguri) হাকিমপাড়ার ইরাদ্রি বসু (Iradri Basu) খৌন্ডের মাথায় একটাই জিনিস ঘুরত- যেভাবেই হোক আমাকে বড় ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। আইআইটি খড়্গপুরের নাম শোনা তখন থেকেই। জীবনের তাই লক্ষ্যও ছিল সেখানে পড়ার। তাই টেবিল টেনিসের ব্যাট তুলে রেখে পড়ার বইয়ের দিকেই মনোযোগ দেওয়া। সারাদিন পড়াশোনার ফাঁকে শুধু মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে একটু দাবা খেলে মনটাকে সতেজ করে তোলার চেষ্টা করত। এই রুটিনেই এবারের জয়েন্ট এন্ট্রান্স (মেইন) পরীক্ষায় (Joint Entrance Exam) রাজ্যে সেরা ইরাদ্রি। মঙ্গলবার ফলপ্রকাশের পর জীবনের একটা বড় হার্ডল সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়েও ইরাদ্রির চোখেমুখে যেন সেই তৃপ্তিটা নেই। কারণ তার কথায়, ‘আরও এগিয়ে যেতে হবে আমাকে।’
বাবা শরবন খৌন্ড মালবাজারের ওমর আলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা বৈজয়ন্তী বসুর একটি পার্লার রয়েছে। একমাত্র ছেলের এই সাফল্যে তাঁরা খুশি। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দার্জিলিং পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করার পর দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় ৯৩.৬ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর ফুলবাড়ির দিল্লি পাবলিক স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও জয়েন্টের পরীক্ষার জন্য সেবক রোডের একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নিয়মিত ক্লাস শুরু করে। আর সেখান থেকেই সফল ইরাদ্রি।
ইরাদ্রির কথায়, ‘পড়াশোনায় আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই বেশি। বাবা সবকিছু নজরে রাখত। কোথায় কী পরীক্ষা হচ্ছে, তার খোঁজ রাখত বাবা। মাও আমার প্রতি নজর রাখত, আমার খাওয়াদাওয়া কেমন হচ্ছে, এইসব।’
দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পড়লেও ইরাদ্রি কিন্তু ভাবতে পারেনি এই পরীক্ষায় ৯৯.৯৯ পার্সেন্টাইল পাবে। তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফল জানার পর কিছুটা অবাকই হয়ে যায় সে প্রথমে।
তবে শুধু পাঠ্যবই নয়, সত্যজিৎ রায়, শরৎচন্দ্রের বইতেও মুখ গুঁজে থাকতেও নেহাৎ খারাপ লাগে না ইরাদ্রির। বাবা শরবনের কথায়, ‘আমি অতিরিক্ত কিছু করিনি। একজন বাবার যা দায়িত্ব, আমি সেটাই করেছি। সন্তানদের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে হবে না। সন্তানের যেদিকে নজর, সেদিকটাতেই তাকে উৎসাহিত করতে হবে।’ বৈজয়ন্তীর কথায়, ‘আমার ছেলেটা খুব ভালো। খাওয়া নিয়ে কোনও বায়না নেই। যা দেওয়া হয় তাই খাবে। ওর তরফ থেকে কখনও কোনও অভিযোগ আমরা শুনিইনি।’
এত সাফল্যের মধ্যে একটাই আফসোস ইরাদ্রির। সর্বভারতীয় র্যাংকিংয়ে নাম নেই। তবে এই সাফল্যও যে কম নয়, সেটাই তাকে বোঝাচ্ছেন শরবন ও বৈজয়ন্তী।