সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: নৌকাঘাটে মহানন্দার নোংরা জলে হাঁটু অবধি ডুবিয়ে এক ব্যক্তি পাথরের ওপর জামাকাপড় কাচাকাচি করছিলেন। নদীর পাড়ে শ্যাওলা আর জমে থাকা আবর্জনার পাশে স্তূপ করে রাখা বিছানার চাদর, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের ব্যবহৃত অ্যাপ্রন, বিশেষ পোশাক ইত্যাদি। পাশেই একটি গামলার মধ্যে দুই পা দিয়ে সেই চাদর, পোশাক মাড়িয়ে ‘পরিষ্কার’ করছিলেন তিনি। সেই দৃশ্য দেখলে যে কারও শরীর শিউরে উঠতে পারে। কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই কাপড়জামা? প্রশ্ন করতেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানালেন, শিলিগুড়ির (Siliguri) বর্ধমান রোডের একটি নার্সিংহোমের (Nursing Home)। এসব নিয়মিত এখানেই ধোয়া হয়।
বিষয়টি সামনে আসার পর আতঙ্ক বাড়ছে। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শহরবাসী। নৌকাঘাট হয়ে পোড়াঝাড়ের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার বাঁ পাশের ঘাটটিতে সকালের দিকে গেলে এই দৃশ্য দেখা যাবে। পোড়াঝাড়ের বাসিন্দা অসিত দাস বলছিলেন, ‘যাঁরা কাপড় কাচার এমন দৃশ্য দেখবেন, তাঁদের নার্সিংহোমের চিকিৎসার ওপর থেকে ভরসা উঠে যাবে।’
এ ব্যাপারে দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তুলসী প্রামাণিক আশ্বাস দিয়েছেন, গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। অস্বাস্থ্য পরিবেশে কাপড়, জামা ধুলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করা হবে।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হোক কিংবা শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, সরকারি ক্ষেত্রে নিজস্ব উন্নত মানের লন্ড্রি রয়েছে। সেখানে কীভাবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নোংরা জলে ধোয়া জামাকাপড় চিকিৎসায় ব্যবহার করছে। জানা গিয়েছে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ একটি বেসরকারি সংস্থাকে এসব ধোয়ার বরাত দিয়েছে। অভিযোগ, ওই সংস্থার লোকজন রোজ ভোরবেলায় নদীতে অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে সেই কাপড় নিয়ে গিয়ে কাচাকাচি করছেন। এরপর সেগুলো নদীর পাড়ে শুকোনো হচ্ছে। যার ওপর দিয়ে গবাদি প্রাণীর দল অবাধে চরে বেড়ায়। তারপর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় সেই জামাকাপড়।
বিভিন্ন নর্দমার জল মহানন্দায় মিশছে। তার ওপর নদীর জলে মাঝেমধ্যেই ছোট-বড় যানবাহন পরিষ্কার করার অভিযোগ ওঠে। মহানন্দা বাঁচাও কমিটির সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎস্না আগরওয়ালের প্রতিক্রিয়া, ‘প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন। যেই নার্সিংহোম এমনটা করছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া উচিত। সমস্ত পরিকাঠামো রয়েছে, কি না সেই বিষয়টি দেখে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে হবে।’ কড়া পদক্ষেপ না করা হলে নদীতে নার্সিংহোমের কাপড়-জামা ধোয়া বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি।