শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: মাসখানেক আগে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি (Siliguri) মহিলা থানায় দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক তরুণী। অভিযোগের ভিত্তিতে ভিনরাজ্য থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আদালতে তোলার পর অবশ্য নিজের ভুল বুঝে ওই তরুণীকে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিলেন ওই তরুণ। ওই তরুণ-তরুণী এখন ভালোই আছেন। কোনও অভিযোগ নেই।
প্রেম ভাঙার জন্যই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শহরের আরেকজন। সেক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল, মেয়ে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই তরুণ নিজের ভুল বুঝতে পারে। ওই তরুণীর দায়িত্ব নিতেও রাজি হয়।
শহর শিলিগুড়িতে প্রেমের সম্পর্কে (Love relation) জড়ানোর পর কোনও কারণে সেটা ভেঙে যাওয়ার পরই অপরাধমূলক অভিযোগ দায়েরের সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় বাড়ছে। শুধুমাত্র শিলিগুড়ি মহিলা থানার হিসেব ধরলে, আগে দুই মাসে দুটো বা তিনটে মামলা হত। এখন এক মাসেই দুটো বা তিনটে মামলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, অপরাধ কি বাড়ছে? পুলিশকর্তারা অবশ্য সেকথা মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, আগের থেকে সচেতনতা বেড়েছে। তাই মেয়েরা বেশি করে তাঁদের ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা জানাতে পারছেন।
যদিও আরেক তথ্যও তুলে ধরছেন শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অলোক ধাড়া। তাঁর কথায়, ‘মেয়েরা সচেতন হচ্ছেন, এটা ঠিক। তবে অনেকক্ষেত্রে আইনের মারপ্যাঁচের সুবিধা নিয়ে প্রেমিকদেরও বিপদে ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনাও আমরা দেখেছি।’ প্রশ্ন উঠছে, প্রেমের ভাঙনের পর কী ধরনের অপরাধমূলক কাজের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে শহরের একটা অংশের তরুণ-তরুণীর মধ্যে। অধিকাংশক্ষেত্রেই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগটাই সামনে আসছে। এক মহিলা পুলিশকর্তার কথায়, ‘এই ধরনের অভিযোগ ধর্ষণের একটি ধারা হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে। কারণ ধর্ষণের বিভিন্ন ধারা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বাসভঙ্গের ধারাটাই লাগু হচ্ছে।’
এ ধরনের অভিযোগ যাঁরা করেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, কোনও উপায় না থাকার কারণেই ওঁরা অভিযোগ করে থাকেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেন, ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। আবার সম্পর্কের ভাঙনের পর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলেও প্রেমিকও অনেক সময় ছাড়তে চায় না। সেক্ষেত্রে ভিডিও বা সম্পর্কে থাকাকালীন কোনও ছবি দিয়ে প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেল করে থাকে। সম্প্রতি এক নাবালিকার সঙ্গেও তার প্রাক্তন প্রেমিক এমন করার চেষ্টা করেছিল। ওই প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভাঙার পর ওই নাবালিকা আরেক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। তবে প্রাক্তন প্রেমিক ওই প্রেমিকাকে ভুলতে না পারায় বিভিন্নভাবে সমস্যা তৈরি করছিল। শেষমেশ পকসো মামলায় ওই প্রেমিক এখন শ্রীঘরে।