হরিশ্চন্দ্রপুরঃ হরিশ্চন্দ্রপুর থানা (Harischandrapur) এলাকায় ফুলহার নদীর বালি-মাটি কেটে অবাধে পাচার হচ্ছে বিহারে। সেই মাটি চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের বিভিন্ন ইটভাটায়। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নাকের ডগায় এই কারবার চললেও কোনও হেলদোল নেই বলে প্রশাসনের। মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। এবার মাটি মাফিয়াদের চোখ পড়েছে কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা খাস জমির ওপর। সেই জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টরে তা পাচার করছে বিহারের ইটভাটা গুলিতে। এই বালি-মাটি পাচারের কারবারে নাম জড়িয়েছে স্থানীয় সিপিএমের প্রধানের স্বামীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি পাচারে বাধা দিতে গেলে মাফিয়াদের হুঁমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। শনিবার এলাকার মানুষজন একত্রিত হয়ে আটকে দিলেন মাটি কাটার আর্থমুভার এবং ট্রাক্টর।
জানা গিয়েছে, মাটি পাচারের ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাংলা-বিহার সীমানা এলাকায়। ওই এলাকায় প্রায় তিন বিঘা একটি খাস জমি রয়েছে। জমিটি রয়েছে কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। সেই জমিতেই আট ফুট গর্ত করে মাটি কাটছে বিহারের মাটি মাফিয়ারা। প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক্টরে সেই মাটি পাচার হয়ে যাচ্ছে বিহারে। সেই রাজ্যে মাটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইটভাটা গুলিতে। এলাকাবাসী মাটি কাটতে বাধা দিলে মাফিয়াদের দাবি তাদের কাছে প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে।
কিন্তু কি ভাবে বাংলার সরকারি জমিতে বিহারের মাফিয়ারা মাটি কাটার অনুমতি পাচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। যদিও এলাকাবাসীর আপত্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এদিকে মাটি কাটার আর্থ মুভার, মাটি বোঝাই ট্রাক্টর এবং মাটি মাফিয়াদের আটকে রেখে প্রতিবাদের শামিল হন স্থানীয়রা। এই খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শামীমা পারভীনের স্বামী মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে ট্রাক্টরগুলিকে ছাড়িয়ে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আজাদ জানান “আমরা বাধ্য হয়ে মাটি বোঝাই একটি গাড়িকে আটকে দিয়েছি, বাকিগুলো পালিয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে বল কোন লাভ হয়না বলেই নিজেরাই পথে নেমেছি”। বিজেপি নেতা রুপেশ আগরওয়ালের অভিযোগ, বিহারের মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে এলাকার তৃণমূল আর সিপিএম নেতাদের যোগ রয়েছে। এরাই মিলেমিশে মাটি পাচার করছে।
আজাহারউদ্দিনের অবশ্য দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের মদতে মাটি কাটার অভিযোগ মিথ্যে। রায়তি নাকি পঞ্চায়েতের জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, তা মাপজোক করে দেখা হচ্ছে।’’ এই মহম্মদ আজহারউদ্দিন এক সময় তৃণমূলের নেতা ছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট না পেয়ে সিপিএমে যোগদান করেন। সিপিএম থেকে তার স্ত্রী জিতে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের পঞ্চায়েতে প্রধান হন। যদিও সম্প্রতি কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সহ ৭ সদস্য যোগ দিয়েছে তৃণমূলে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও।
এদিকে, অবৈধভাবে মাটিকাটা রুখতে প্রত্যেকটি ব্লকে গঠন হয়েছে ৩ সদস্যের কমিটি। যে কমিটিতে রয়েছেন পুলিশের আইসি, বিডিও এবং বিএলআরও। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (চাঁচল) পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দপ্তরের কর্মীদের এলাকায় পাঠানো হয়েছে। সব খতিয়ে দেখার পর অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফেরদৌস জানান আমাদের দল অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করবে না। দলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ থাকলে দল অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।।