শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: বদলে যাওয়া জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব এসে পড়ছে উত্তরবঙ্গের একমাত্র সংগঠিত শিল্প চায়ের ওপর। উচ্চ গুণগতমানের কাঁচা পাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে একরের পর একর জমির চরিত্রের পরিবর্তন ও সেই সঙ্গে উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া। ঠিক এই বিষয়টির ওপর প্রথম বিজ্ঞানধর্মী কাজ শুরু হচ্ছে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির রাজ্যে। মূল দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ (আইসিএআর)। সহযোগিতায় থাকছে টি বোর্ড ও রাজ্য কৃষি দপ্তর। গবেষণাগারে বাগানের মাটির নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা (Soil testing of tea gardens) করে কোথায় ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ করা জরুরি তা বাতলে দেবেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি চা আবাদি এলাকার ভূগর্ভস্থ জলস্তর কতখানি নেমে গিয়েছে এবং জল ধরে রাখার ক্ষেত্রে কী করণীয় সেটাও এই নয়া প্রকল্পের আওতাধীন। টি বোর্ডের অর্থানূকূল্যে আগামী ৩ বছর ধরে উত্তরবঙ্গের পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সজুড়ে কাজটি হবে। ইতিমধ্যেই কালিম্পং সায়েন্স সেন্টারে ওই জেলার চা উৎপাদকদের সঙ্গে আইসিএআর, কৃষি দপ্তর ও টি বোর্ডের একটি বৈঠক হয়ে গিয়েছে। আইসিএআরের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ সয়েল সার্ভে অ্যান্ড ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিংয়ের রাজ্য অধিকর্তা ডঃ ফিরোজ হাসান রহমান বলেন, ‘চায়ের গুণগত উৎকৃষ্টতার সঙ্গে মাটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চা আবাদি এলাকার জমির গঠনশৈলী সহ চরিত্রে বড়সড়ো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। জলবায়ুর বদল এর একটা বড় কারণ। সেটাকেই খুঁজে বের করে উত্তরবঙ্গের চায়ের মান আরও বাড়াতে কী করা প্রয়োজন তা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কাজ শুরু হবে।’
আইসিএআর জানাচ্ছে, প্রথমে পাহাড়কে দিয়ে কাজটি শুরু হবে। বাগানের জমির গত ৫ বছরের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর তা মিলিয়ে দেখা হবে কেন্দ্রীয় সংস্থাটির কাছে আগে থেকেই সংরক্ষিত বেস তথ্যর সঙ্গে। এরপর দেড় থেকে দু’ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে নেওয়া হবে মাটির নমুনা। তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে জলধারণ ক্ষমতা, অম্লত্ব-ক্ষারত্বের পরিমাণ সহ বিভিন্ন অণুজীব, নাইট্রোজেন, জৈব কার্বন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, বোরনের মতো চা গাছের সুস্থতা ও সজীবতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ওই সমস্ত খনিজ কী পরিমাণে রয়েছে তা বের করা হবে। এরপর টি বোর্ড হয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ যাবে বাগানগুলির কাছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে জিও ট্যাগিং করে একই ভৌগোলিক পরিমণ্ডলের মধ্যে অবস্থিত বাগানগুলিকে প্রথমে চিহ্নিত করা হবে। এরপর চলবে এলাকাভিত্তিক প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করার কাজ।
কৃষি দপ্তরের জলপাইগুড়ির সহ কৃষি অধিকর্তা ডঃ মেহফুজ আহমেদ বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ও জমির ওপর প্রভাব নিয়ে চা শিল্পে এরকম কাজ এই প্রথম।’ চা বণিকসভাগুলির শীর্ষ সংগঠন সিসিপিএ-র সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা বলেন, এটা সময়ের দাবি ছিল। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।