পারমিতা রায়, শিলিগুড়ি: ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল রুপোলি পর্দায় অভিনয় করার। শহর শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় সোলাঙ্কি শর্মা মনে মনে একটাই কথা বলতেন, আমার গন্তব্য আলাদা। আর তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষে কাউকে না বলেই দুম করে আবেদন করে বসেন অনুপম খেরের অভিনয় স্কুলে। অডিশনে চূড়ান্ত হয়ে পাড়ি দেন স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ে তারপর বাকিটা স্বপ্নের মতোই।
সম্প্রতি জি ফাইভ প্ল্যাটফর্মে মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়-তে কাস্টিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন কালচিনির মেয়ে সোলাঙ্কি। সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে কাজ করে ফেলেছেন তিনটি হিন্দি ধারাবাহিকেও। তবে রাস্তাটা মোটেও সহজ ছিল না। পদে পদে এসেছে প্রতিবন্ধকতা। বলি দুনিয়ায় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে অভিনয়ে পাশপাশি কাস্টিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও ব্যস্ত সোলাঙ্কি।
তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা কালচিনিতে। বাবা নির্মল শর্মা সরকারি কনট্রাক্টরের কাজের সঙ্গে যুক্ত। মা সুনীতা শর্মা হ্যামিল্টনগঞ্জ হাইস্কুলের শিক্ষিকা। অভিনয়ের পেছনে মায়ের অবদানের কথাই বলছিলেন সোলাঙ্কি। মুম্বই থেকে মুঠোফোনে উত্তরবঙ্গ সংবাদকে বললেন, মা-ই আমাকে সবকিছু শিখিয়েছে। পড়াশোনা, নাটক, আঁকা থেকে শুরু করে সবটাই। তাই আমি আজ যেখানে আছি পুরো কৃতিত্ব মায়ের।
২০১৬ সালে প্রথম মুম্বইয়ে পৌঁছে সোলাঙ্কির বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, যাত্রাপথটা খুব একটা মসৃণ হবে না। স্বপ্ননগরীতে নিজের স্বপ্নপূরণের পথের কাহিনী শোনাচ্ছিলেন সোলাঙ্কি, প্রথমে একটি ধর্মশালায় থাকতাম। তিনমাস ডিপ্লোমা শেষে ঘুরে বেড়াতাম আরামনগর ও মাহারা কলোনিতে। করোনার আগে সেখানে ৪০০-৫০০ মানুষের অডিশনের লাইন পড়ত। সকালে টিফিন নিয়ে বেরিয়ে রাতে ফিরতাম। সবচেয়ে সমস্যা হত মানুষকে পরখ করতে। কে আসল আর কে ভুয়ো তা বুঝতেই অনেক সময় লেগেছে।
অনেকদিন কঠিন পরিশ্রমের পর আশার আলো দেখতে পান। ডিডি ন্যাশনাল-এ কালেক্টার বহু নামে একটি সিরিয়ালে খলনায়িকার চরিত্রে সুযোগ পান তিনি। পরবর্তীতে স্টার প্লাসে ইয়ে যাদু হ্যায় জিন কা, জি টিভিতে ইস মোড় সে জাতে হ্যায়-তে অভিনয়ে সুযোগ পান। এরই মাঝে অভিষেক ব্যানার্জি অভিনীত ওয়াকিল বাবু নামে একটি শর্টফিল্মে আইনি পড়ুয়া হিসেবে তাঁকে দেখা যায়।
অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেকে আরও মেলে ধরতে সোলাঙ্কি শুরু করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করা। কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করতে গিয়ে বললেন, দক্ষিণ ভারতে সোলাঙ্কি পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই প্রথমে মনোজ স্যর আমার নাম শুনে একটু অবাকই হন। আর ঘটনাচক্রে সেই ওয়েব সিরিজে ওঁর চরিত্রের পদবিও সোলাঙ্কি থাকায় সবাই মজা করে বলত, সেটে দুজন সোলাঙ্কি রয়েছে।
কিছুদিন আগে ওকে বেটা বাই নামে একটি সিরিজেও কাজ করছেন তিনি। যেখানে চারটে আলাদা গল্প রয়েছে। সুনীল গ্রোভার, স্বস্তিকা মুখার্জি, রঘুবীর যাদব কাজ করেছেন সেখানে। সোলাঙ্কি বলছেন, স্বস্তিকার সঙ্গে দেখা না হলেও বাকিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
ঘুরেফিরে এল শহর শিলিগুড়ির কথাও। সোলাঙ্কির স্মৃতিচারণ, কলেজে পড়ার সময় আমার প্রিয় বান্ধবী রঞ্জিনী সেনগুপ্তের বাড়িতে থাকতাম। ওঁর মায়ের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শহরটার প্রতিও আলাদা মায়া রয়েছে।
বর্তমানে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের কয়েকটি কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত এই তরুণী। মানুষ চেনার দক্ষতা ও ধৈর্যশক্তি নিয়ে এই জগতে পা রাখার জন্য নতুনদের বার্তাও দিচ্ছেন।
কালচিনি থেকে শিলিগুড়ি ও সেখান থেকে সোজা মুম্বইয়ের রুপোলি জগৎ, চাইলে যে আকাশ ছোঁয়া যায়, তা কার্যত প্রমাণ করে দিচ্ছেন অজগাঁয়ের সেই মেয়েটি। যেন বয়ে আনছেন নতুন সুবাস। নতুন প্রজন্মের জন্য।