ফালাকাটা: সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজা বন্ধ। তবে তার মধ্য থেকেই পাওয়া যাচ্ছে গোঙানির আওয়াজ। তাহলে কি ভেতরে কোনও রোগী আটকে পড়ে রয়েছেন? এই নিয়ে মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘক্ষণ হইচই চলল ফালাকাটা শহরের সারদানন্দপল্লির যাদবপল্লি এলাকায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা খোলা হলেও কিন্তু ভেতরে আর কাউকে দেখা যায়নি। তাই শেষপর্যন্ত রহস্য মেটার বদলে আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
এদিন সকালে এলাকাবাসীর ফোন পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন সেই সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা। খবর পাঠানো হয় পুলিশে। ততক্ষণে এলাকায় ভিড় জমে গিয়েছে। স্থানীয় তরুণ অমিত মণ্ডলের কথায়, ‘আমরা রোজ সকালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে আড্ডা দিই। এদিনও পাড়ার অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ কানে এল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতর কোনও মহিলা গোঙাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বমির ও কাশির শব্দও আমরা পাই।’ ততক্ষণে অন্যরাও জড়ো হয়ে গিয়েছেন। তাঁরাও একই রকমের শব্দ শুনতে পান। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশে খবর দেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এদিন প্রাতর্ভ্রমণে বের হয়েছিলেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। ভ্রমণ শেষ করে তাঁরা যাদবপল্লি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁদের মনে হয় ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে কেউ রয়েছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এমনভাবে গোঙানির শব্দ হচ্ছিল যে আমরা ভেবেছিলাম স্বাস্থ্যকর্মীরা হয়তো ভুল করে কাউকে ভেতরে রেখেই তালা মেরে চলে গিয়েছেন।’ প্রশ্ন ওঠে, স্বাস্থ্যকর্মীরা কি এমন ভুল করতে পারেন? যদি কোনও রোগী না হয়, তাহলে ভেতরে কে রয়েছে? এসব প্রশ্ন পাক খেতে শুরু করে। বাসিন্দাদের এমন আলোচনার মধ্যেই অনেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ফোন করে বিষয়টি জানান। আবার পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়।
যাদবপল্লি সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট শম্পা সাহা চলে আসেন। উপস্থিত সকলের চোখের সামনে তিনি তালা খুলতে যাবেন, সেই সময় আবার ফালাকাটা থানার পুলিশ চলে আসে। পরে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই শম্পা সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালা খোলেন। এলাকার বাসিন্দারাও ভেতরে ঢোকেন। ভেতরে ঢোকার পর তাঁরা আর কাউকে দেখতেও পাননি আর গোঙানির শব্দও শুনতে পাননি।
শম্পার কথায়, ‘এলাকার বাসিন্দাদের থেকে ফোন পেয়ে প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তবে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আমরা কাউকেই ভেতরে ভুল করেও আটকে রাখিনি।’ এদিন ওই হইচইয়ের পর অবশ্য যথারীতি সেই সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ হয়েছে। এই ভুল বোঝাবুঝির একটা ব্যাখ্যা দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন শম্পা। বলেন, ‘আমার মনে হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে বাথরুমের দরজা হাওয়ায় নড়ছিল, তারই শব্দ হচ্ছিল। সেই শব্দ শুনে স্থানীয়রা ভুল ভেবেছেন।’
এদিনের ঘটনার পর শহরের বাসিন্দাদের একটা অংশের মধ্যে অলৌকিক কাণ্ড নিয়ে জল্পনা শুরু হলেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন শহরের বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্যরা। ফালাকাটা বিজ্ঞানমঞ্চের সম্পাদক ধীরাজ সাহা বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্যকর্মী দিদি ঠিকই বলেছেন। এর মধ্যে কোনও অলৌকিক ব্যাপার নেই। বাথরুমে শব্দ হতে পারে কিংবা ভাম জাতীয় কোনও প্রাণীও ভেতরে ঢুকে শব্দ করতে পারে।’