পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: বন্যপ্রাণী উপদ্রুত নির্বাচনি বুথগুলির নিরাপত্তায় এবার থাকছেন বনকর্মীরা। ভোটের (Lok Sabha Election 2024) একদিন আগেই হাজির থাকবে তাঁদের টিম। ইতিমধ্যে এমন কিছু বুথ চিহ্নিত করেছে গরুমারা (Gorumara) বন্যপ্রাণ বিভাগ। শুধু হাতি, বাইসন বা লেপার্ডই নয়, বাড়তি নজর থাকবে নেওড়ার হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার বা কালো ভালুকের উপর। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) ও আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) লোকসভা কেন্দ্রের জন্য গরুমারা ও জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগ এই পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রয়োজনে বন্যপ্রাণ অধ্যুষিত বুথ লাগোয়া এলাকায় দুই বনকর্মীর স্পেশাল টিম ভোটের আগের রাত থেকে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবে। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বৃহস্পতিবার এখবর জানান।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে একমাত্র জলপাইগুড়ি আসনটি গরুমারা জাতীয় উদ্যান, চাপড়ামারি অভয়ারণ্য, বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল ও জলপাইগুড়ি বনাঞ্চলের অংশ নিয়ে তৈরি। নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যান কালিম্পংয়ে থাকলেও সেখান থেকে প্রায়ই হিমালয়ান কালো ভালুক নামে। ভোটে তাদের ঠেকাতে নজরদারি ও টহল দেবে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ। বন দপ্তর থেকে ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণ অধ্যুষিত বসতির বুথের তালিকা তৈরি হয়েছে। জেলা নির্বাচন দপ্তর থেকেও এমন বুথের তালিকা পাঠানোর পর এবিষয়ে বন দপ্তর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে খবর।
নাগরাকাটা বিধানসভা এলাকার খেরকাটা, বামনডাঙ্গা টন্ডু, ডায়নায় হাতির উপদ্রব আছে। কিন্তু মেটেলির উত্তর-দক্ষিণ নেওড়া রেঞ্জের সামসিং, ইঙ্গো, ইনডং, চিলৌনি, জুরন্তীতে যাতে কালো ভালুক না নামে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। গত বছর জলপাইগুড়ি বন বিভাগের রেডব্যাংক চা বাগানে চিতাবাঘের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। জলপাইগুড়ি ডিভিশনের জটেশ্বরেও চিতাবাঘের হামলায় এক মহিলার মৃত্যু হয়। স্বভাবতই ভোটে বাড়তি সতর্ক থাকছে বন দপ্তর।
উল্লেখ্য, গত বছর রাজগঞ্জ বিধানসভা এলাকার মহারাজঘাটে হাতির হামলায় পদপিষ্ট হয়ে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। রংধামালি, গৌরীকোন, বোদাগঞ্জ বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের অধীন। হাতি মাঝেমধ্যেই তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে চরে আসে। ময়নাগুড়ি বিধানসভা এলাকার রামশাই, কালামাটি থেকে ধূপগুড়ির খুট্টিমারি, রাভা বস্তি, সোনাখালি, মোরাঘাট বনবস্তিতেও হাতি, চিতাবাঘের উপদ্রব আছে। সেজন্য বন দপ্তর আগাম সতর্কতা হিসাবে টহল বাড়িয়েছে। জলপাইগুড়ি বন বিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি জানান, গরুমারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বনবস্তিতে নজরদারি চলবে। জেলা শাসক শামা পারভিন জানান, বন দপ্তরের সঙ্গে সব সময় আলোচনা হচ্ছে। বন্যপ্রাণ অধ্যুষিত বুথগুলিতে বন দপ্তর বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। দ্বিজপ্রতিম জানান, আপাতত হাতি বা অন্য প্রাণীরা বুথ বা লাগোয়া এলাকায় না এলেও এখনই কুনকি নামানোর পরিকল্পনা নেই। স্পেশাল টিমগুলির কাছে আরটি সেট, বন্যপ্রাণীর গতিবিধির আগাম খবর লেনদেন, ঘুমপাড়ানি গুলি, জাল, প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্র, সার্চ লাইট, আতশবাজি, গাড়ি, সাপ ধরার সরঞ্জাম সবকিছুই থাকবে। কালিম্পং বন বিভাগের সঙ্গেও সমন্বয় রাখা হচ্ছে।