বেলাকোবা: হাল ছাড়তে নেই। বরং চরম দুঃসময়েও জীবনের জয়গান গেয়ে যেতে হয়। শিলিগুড়ির সংহতি মোড়ের মধ্য তিরিশের বাসিন্দা অরুণাভ পালচৌধুরী এই তত্ত্বেই বিশ্বাসী। জীবন প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। অরুণাভ বিশেষভাবে সক্ষম। তবুও ডরাননি। এমবিএ করে বেসরকারি চাকরি করছিলেন। দুর্ঘটনায় একটি পা কাটা যায়। পরে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। তবুও জীবনের প্রতি বিশ্বাস হারাননি। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার পর মাসদুয়েক হল গজলডোবা-শিলিগুড়ি ক্যানাল রোডে বেলাকোবা সংলগ্ন গেটবাজার এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় সস্তায় ফাস্ট ফুডের একটি দোকান খুলেছেন। আজকালকার বাজারে যেখানে এক কাপ চা খেতে অন্তত পাঁচ টাকা খসাতে হয় সেখানে অরুণাভ মাত্র এক টাকায় মাটির ভাঁড়ে সবাইকে চা খাওয়াচ্ছেন। দাম কম বলে সেই চায়ের মান কিন্তু মোটেও খারাপ নয়। বরং বেশ ভালো। যাঁরা সেই চা খেয়েছেন বা নিয়মিতভাবে খান, তাঁদের এমনটাই দাবি।
অরুণাভ জানান, তিনি এক বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০১৯ সালের ৯ মার্চ তাঁর জীবনে ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা নেমে আসে। এক সরকারি বাসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে অরুণাভ তাঁর ডান পা-টি খোয়ান। কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে চলাফেরা করলেও তা দিয়ে সেভাবে চাকরির কাজ করা যাচ্ছিল না। অতএব, সেই চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসা। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার পর অরুণাভর জীবন কোন খাতে বইতে শুরু তা পাঠকরা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন। অরুণাভ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ব্যবসা কী করে করতে হয় সেটা পড়াশোনার সূত্রে বেশ জানা। তরুণ বলে চলেন, ‘আমরা বাঙালি। আমাদের জীবনে আড্ডার জুড়ি নেই। আর চায়ের মতো আড্ডা- বন্ধু আর কে-ই বা আছে! সেই চা’ই আমাকে পথ দেখিয়েছে। এক টাকায় মাটির ভাঁড়ে আমি সবাইকে ৫০ এমএল চা খাওয়াই।’ আজকালকার বাজারে ব্যবসায়ীদের অনেকেই এক টাকার মুদ্রা নিতে চান না। অথচ সরকারিভাবে এই মুদ্রা কিন্তু বাতিল করা হয়নি। অরুণাভ বললেন, ‘আমার এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমি এক টাকার মুদ্রাকেও ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
তরুণের তৈরি চা খেয়ে এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা অনন্ত রায়, উত্তম মণ্ডলরা বলছেন, বহু আগে এক টাকায় চা খেতাম। আবার সেই স্মৃতি যেন ফিরে পেয়েছি। যাদবপুর থেকে গজলডোবায় আসা পর্যটক সুমন দাস, সমীর বসু, বাপি সরকাররাও অরুণাভর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে কৃষক, চা শ্রমিকরা রোজ একটিবার হলেও অরুণাভর দোকানে ঢুঁ মারেন। তরুণের তৈরি চায়ে গলা ভেজান। জীবনের জয়গানে মুগ্ধ হন।