প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট মুম্বইতে শুরু হচ্ছে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় সামিট। বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান মুখ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার একদিন আগেই বুধবার পৌঁছে গেছেন মুম্বইতে। ঠিক সে সময় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজধানী দিল্লিতে আগমন নিয়ে প্রবল জল্পনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য রাজনৈতিক পরিসরে।
সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার রাতেই কলকাতা ছেড়ে দিল্লি উড়ে এসেছেন অভিষেক৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর সঙ্গে একই ফ্লাইটে দিল্লি এসেছেন নির্বাচনী বিশ্লেষক প্রশান্ত কিশোর। জল্পনা শুরু, আসন্ন ২০২৪ এর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী রণকৌশল জরিপ করতে পারেন ‘পিকে’। তবে বিরোধীদের ‘মুম্বই সামিটে’র মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ডে’র এই ভাবে আচমকা দিল্লি আগমনের নেপথ্যে অন্য সমীকরণ রয়েছে, তা একবাক্যে মানছেন রাজ্য রাজনৈতিক মহলের হর্তাকর্তারা। মনে করা হচ্ছে, কলকাতায় ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থায় ইডির তল্লাশি অভিযান বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতেই দিল্লি উড়ে এসেছেন অভিষেক।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে, এমন তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সময় ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। পরবর্তী সেই সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাতে বলা হয়েছিল, ‘তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও এবং ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন।’ যদিও অন্য একটি সূত্রের দাবি, অভিষেক আগে ওই সংস্থার সিইও পদে ছিলেন। এর বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক।
মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে উঠে আসে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসে ইডির তল্লাশির কথাও। অভিষেকের বক্তব্য, তিনি বিদেশ থেকে ফেরার পরই আবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে’র অফিসে তল্লাশি চালানোর সময় সংস্থার একটি কম্পিউটারে যে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড হয়েছে, সেই কথাও বলেন মেয়ো রোডের সমাবেশে। সেই কথা বলার সময় অভিষেক অবশ্য সংস্থার নামের কথা উল্লেখ করেননি। পরিবর্তে ‘আমার অফিস’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করতে দেখা গেল অভিষেককে। পরবর্তী কালে এই মামলা নিয়ে আদালতের রোষের মুখে পড়ে তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করা হচ্ছে না? কেন ভয় পাচ্ছে ইডি? মঙ্গলবার এই প্রশ্ন করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেকের বিরুদ্ধে তদন্তে কী অগ্রগতি হয়েছে তা ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে ইডিকে। এর পরেই মঙ্গলবার রাতে প্রায় নি:শব্দে দিল্লি রওনা হন অভিষেক। সূত্রের দাবি, বুধবার প্রায় সারাটা দিন দিল্লিতে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ পোড়খাওয়া আইনজ্ঞ এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অভিষেক। ইডি যদি আবার তাঁকে তলব করে তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি৷ এর পর বুধবার সন্ধে ৭ টা নাগাদ দিল্লি থেকে মুম্বই উড়ে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দিল্লি আগমন এবং রাজধানীতে গতিবিধি নিয়ে অভাবনীয় গোপনীয়তা বহাল রেখেছে তাঁর দল এবং রাজ্য সরকারি আধিকারিকরা।