কলকাতা ও মালদা: আশানিরাশার দোলাচলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। হাইকোর্টের (Calcutta High Court) রায়ে যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এখন তাঁদের শেষ ভরসা। শীর্ষ আদালতে মামলাটির (SSC recruitment case) শুনানি আজ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাটি শুনবে খোদ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ২৪ ঘণ্টাও যেন দীর্ঘ সময় কর্মচ্যুতদের কাছে।
কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, যেখানে যত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন, সবাই যেন হঠাৎ এক হয়ে প্রতীক্ষা করছেন সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে। এঁদের প্রতিনিধি হিসাবে ইতিমধ্যে নয়াদিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছেন গার্ডেনরিচের নাদিয়াল হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক রাজীব হাঁসদা, কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল, হুগলির জিরাটের কৌশিক মণ্ডল, শিক্ষাকর্মী বিকাশ পাল প্রমুখ।
তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য এখন সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ পাওয়া। ফোনে ইন্দ্রজিতের গলায় উদ্বেগ ঝরে পড়ল। তিনি বলছিলেন, ‘স্থগিতাদেশ না পেলে আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন বটে, বেতন দিয়ে যাবেন, কিন্তু আমরা তো বুঝি, তা আইনত সম্ভব নয়।’ রাজীবের মুখে ধরা পড়ল শিক্ষকদের মরিয়া চেষ্টা, ‘এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ আনা।’
তাতে আপাতত চাকরি বাঁচবে, বেতনও বন্ধ হবে না। এই অপেক্ষায় চাকরিহারাদের সঙ্গে মিলে গিয়েছে রাজ্য সরকারও। শিক্ষা দপ্তর, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশনের দায়ের করা মামলায় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশের অপেক্ষার কথা ধরা পড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়।
মালদার সুজাপুরে রবিবার নির্বাচনি জনসভায় তিনি বলেন, ‘আপনারা ভাবুন তো আপনার ঘরের ছেলেমেয়েদের যদি চাকরি বাতিল হয়ে যায় আর সাত বছরের চাকরির বেতন ১২ শতাংশ সুদ সমেত ফেরত দিতে হয়, তাহলে আপনার অবস্থাটা কেমন হবে। আমরা মেনে নেব না। আমরা কোর্টে গিয়েছি। এই চাকরিখেকোদের মানি না, মানব না।’ চাকরিহারাদের উদ্বেগ এখন লোকসভা নির্বাচনে অনেক দলেরই প্রচারের অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
তৃণমূল নেত্রীর ভাষায়, ‘বিজেপি চাকরিখেকো বাঘ। ওদের কাছে যখন কোনও ইস্যু থাকে না, তখন বেকারদের চাকরি খেয়ে নেয়। ভাত দেওয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই।’ কলকাতার শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল আশায় আছেন, ‘যদি মামলাটি সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির জন্য ওঠে, তাহলে স্থগিতাদেশ পাওয়া যাবে।’ তিনি চান এই মামলায় আবার যদি তদন্ত হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের তদারকিতে হোক। সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ চাকরিচ্যুতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘চাকরিহারাদের মধ্যে যাঁরা যোগ্য, তাঁদের জন্য আমাদের লড়াই।’ চাকরিহারাদের হয়ে সোমবার মামলাটি লড়বেন বিশিষ্ট আইনজীবী মুকুল রোহতগি। ভোটের প্রচারে বিজেপির বিরোধিতায় তৃণমূল এখন এই বিষয়টিকে আঁকড়ে ধরেছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আভাস দিতে শুরু করেছেন, এই রায়ের জন্য বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে। তিনি বলছেন, বিজেপির ‘আব কি বার চারশো পার’-এর লক্ষ্য পূরণ আর হবে না। মালদার হবিবপুরে রবিবারের সভায় মমতা বলেন, ‘অনেকে বলছেন, চারশো পেরোতে পারবে না। আমি বলি আবকে বার পগারপার। ওরা দুশোও পেরোতে পারবে না।’ চাকরিহারা ও রাজ্য সরকার তো বটেই, গোটা বাংলা এখন তাকিয়ে শীর্ষ আদালতের দিকে। শত হলেও পেট কা সওয়াল যে।