আসানসোলঃ পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়ার সঙ্গে স্কুলেরই এক অশিক্ষক কর্মী অভব্য আচরণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এমন একটা পোষ্ট। আর তা দেখেই বিচার বিবেচনা না করেই স্কুলে এসে তাণ্ডব চালালেন বেশ কিছু পুরুষ ও মহিলা। এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল শহরের জিটি রোডের একটি নামী গার্লস হাইস্কুলে। যারা তাণ্ডব দেখিয়েছেন তাঁরা নিজেকে অবিভাবক বলে দাবি করেছিলেন। সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে তারা ঐ স্কুলে কার্যত দাপিয়ে বেড়ায় পুলিশের সামনেই। পুলিশ বাধ্য হয়েছিল ঐ অভিযুক্ত অশিক্ষককর্মীকে নিজেদের হেফাজতে নিতে। এই ঘটনায় বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্ত যুবক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আসানসোল দক্ষিণ থানা ও স্কুলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবারের সেই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করে ঐ স্কুল কতৃপক্ষ। তাতে সই করেছেন প্রধান শিক্ষিকা সহ অন্যান্য শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা। স্কুলের তরফে অভিযোগে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় শিক্ষিকা, পড়ুয়া থেকে সকলেই খুবই আতঙ্কিত। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কোন ঘটনা না ঘটলেও, তার মিথ্যে অভিযোগ করায় স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় কে বা কারা পোস্ট করেছে, তা নিয়ে তদন্ত সহ বৃহস্পতিবারের ঘটনার জন্য কারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের খুঁজে বার করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হবে। যেখানে পুলিশ, স্কুল ও স্কুল পরিদর্শক বা ডিআইয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। সেই কমিটি তদন্ত করে একটা রিপোর্ট তৈরি করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে, ঐ পড়ুয়ার পরিবারের তরফে কোন লিখিত অভিযোগ না থাকায় শুক্রবার সকালে অভিযুক্তকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের তরফে তাকে আপাততঃ স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে।
এদিন দুপুরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়াল বলেন, শহরের একটি স্কুলে একটা ঘটনা গতকাল ঘটেছিল। যদিও যে কারণে এই ঘটনা তার কোন লিখিত অভিযোগ নেই। তাই কোন গ্রেপ্তারও নেই। একজনকে আটক করা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুলের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়েছে। এই ঘটনার পেছনে সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট রয়েছে। মিথ্যে একটা কথা সেখানে বলা হয়েছে। তার কোন সারবত্তা নেই। তাই সাইবার আইনে এর তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তকে শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, সোশাল মিডিয়ায় কেউ এমন কোন পোষ্ট করবেন না, যাতে তার থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। তাহলে, তার বিরুদ্ধে সাইবার আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এদিন বলেন, একটা অভিযোগ থানায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি, গোটা ঘটনার তদন্ত করে সত্যিটা বার করা হোক। কেননা এর পেছনে একটা স্কুলের সুনাম, শিক্ষিকা ও নন টিচিং স্টাফদের সম্মান ও পড়ুয়াদের ভবিষ্যত জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে যে যারা সোশাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেছে।
এদিন বিকেলে প্রথমে ঐ স্কুল ও পরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় যান আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। স্কুলে তিনি প্রধান শিক্ষিকা সহ অন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, আমি গোটা ঘটনা নিয়ে স্কুলে কথা বলেছি। থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জের সঙ্গে দেখা করেছি। আমার দাবি, সবটাই তদন্ত করে বার করা হোক। কেউ যদি গুজব ছড়িয়ে স্কুলের বদনাম, পড়ুয়া ও কর্মীর সম্মানহানি করার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া হোক।