শিলিগুড়ি: যৌন নিগ্রহের অভিযোগে শোরগোল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটানির বিভাগীয় প্রধান জ্ঞানবিকাশ ভাণ্ডারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এক ছাত্রী। বুধবার এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হলেন গবেষক ও ছাত্রছাত্রীরা। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে রেজিস্ট্রারের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিলও বের করা হয়। এদিন তাঁরা রীতিমতো ক্লাস বয়কট করে প্রতিবাদে শামিল হন।
ওই ছাত্রী জুনিয়ার রিসার্চ ফেলো হিসাবে জ্ঞানবিকাশের অধীনে গবেষণা করছেন। গবেষণার সুপারভাইজার হওয়ার সুযোগে ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে যৌন নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), ইউজিসির যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত কমিটি এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে লিখিত অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপনকুমার রক্ষিত। ইউজিসির নির্দেশিকা মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার রাতেই লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ওই ছাত্রী। মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্যাম্পাসে হইচই শুরু হয়। ছাত্রীর অভিযোগ, ২০২২ সালের মার্চ মাসে তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের ল্যাবে কাজে যোগ দেন। তারপর থেকেই নানা অছিলায় খারাপভাবে গায়ে হাত দিতেন ওই শিক্ষক। তাঁর বাইকে চেপে ঘুরতে কার্যত বাধ্য করা হত। ফাঁকা ল্যাবরেটরির ভেতরেই তাঁকে যৌন নিগ্রহ করা হয়। কাউকে কিছু জানালে তাঁর শিক্ষাজীবন নষ্ট করে দেওয়ারও হুমকি দেন অভিযুক্ত। অভিযোগপত্রে ছাত্রীটি উল্লেখ করেছেন, তাঁকে মাঝেমধ্যেই দার্জিলিংয়ের হোটেলে এবং শিলিগুড়ি শহরে তাঁর ফাঁকা বাড়িতে রাত কাটানোর কুপ্রস্তাব দিয়েছেন ওই শিক্ষক।
শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো অভিযোগপত্রে ছাত্রীর দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর পূর্বের কর্মস্থল শিলিগুড়ি কলেজেও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। অভিযোগের প্রমাণ হিসাবে একাধিক কথোপকথনের রেকর্ডিং, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ইত্যাদি জমা দিয়েছেন অভিযোগকারী। অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিজের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠুভাবে গবেষণার কাজ যাতে শেষ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বক্তব্য, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেইন্টস কমিটি (আইসিসি)-র পদস্থ আধিকারিকদের পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। ইউজিসির নির্দেশিকা মেনে আইন অনুসারে যা যা করার সবকিছুই আমরা করছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সুভাষচন্দ্র রায়ের মন্তব্য, ‘বিষযটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অভিযোগ জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালযে তরফে পদক্ষেপ করা হয়েছে। আইসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাত্রীটির সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বসে নেই। আমরা আইন মেনেই পদক্ষেপ করছি।’ তবে বহুবার ফোন করলেও সাড়া দেননি জ্ঞানবিকাশ। মেসেজ পাঠালেও উত্তর মেলেনি।