শালকুমারহাট: (Loksabha Election 2024) বাড়ির সামনে গাছতলার নীচে মাচা। সুপারি গাছের ফালা দিয়ে তৈরি মাচা। শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে একাই বসে রবিচন রাভা (Rabichan Rava)। একেবারেই আদর্শ গ্রামীণ পরিবেশ। শালকুমার-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুরিপাড়া গ্রামের বছর চুয়ান্নর রবিচন রাভাকে গত বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে এসইউসিআই(সি)। তারপর থেকেই সকাল, সন্ধ্যায় অনুগামীরা আসছেন। যেমন বাড়ির পরিবেশ, ঠিক তেমনই বাম আদর্শ রক্ষার তাগিদেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বলে মনে করেন রবিচন। হারবেন জেনেও গত লোকসভা নির্বাচনে তিনিই টর্চলাইট প্রতীকে লড়েছিলেন। কিন্তু এবার প্রার্থী হতে চাইছেন না।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার লড়তে চাইছেন না তিনি। তবে একজন কর্মী হিসেবে ভোটের প্রচার করবেন রবিচন। তাই এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করার আবেদন কেন্দ্র ও রাজ্য কমিটিকে জানানো হয়েছে বলে এসইউসিআই(সি)-র জেলা কমিটির সদস্য তরণী রায় জানিয়েছেন।
রবিচন পেশায় কৃষক। স্থাবর সম্পত্তি বলতে বসতবাড়ি সহ দশ বিঘা চাষের জমি আছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে প্রদ্যুৎ রাভা বিএ পাশ করে এখন বেকার। স্ত্রী আরতি রায় রাভা অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা। তবে গোটা পরিবারই এসইউসিআই (সি)-র আদর্শে দীক্ষিত। স্ত্রী দলের মহিলা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ছেলে দলের ছাত্র সংগঠন করেন। রবিচনও সেই ছাত্রজীবনে এই দলের সঙ্গে যুক্ত হন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ তিনি। বর্তমানে তিনি দলের কৃষক ও মূল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৩ সালে তিনি প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হন। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করেন পঞ্চায়েতে। আর ২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে ভোট প্রচার করেন তিনি। সেবার হাজারের মতো ভোট পেয়েছিলেন। ভোটে লড়ার এমন অভিজ্ঞতার জন্যই এবারও প্রার্থী হিসেবে দল তাঁর নাম ঘোষণা করে। কিন্তু রবিচন রাভার কথায়, আমি যে অসুস্থ তা আমি দলকে জানিয়েছি। শুনেছি দল প্রার্থী বদল করবে। কারণ অসুস্থ শরীরে ভোটে প্রচার করতে পারব না। তবে একজন কর্মী হিসেবে নিজের এলাকায় প্রচার করব।
পরাজিত হবেন জেনেও কেন ভোটে লড়া জানতে চাইলে তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা মনে করি ভারতবর্ষ তথা রাজ্যে একমাত্র এসইউসিআই (সি) আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে। তৃণমূল, বিজেপি, এমনকি সিপিএম, আরএসপি, কংগ্রেসে কোনও আদর্শ নেই। ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো দলগুলিও আজ বাম আদর্শচ্যুত। তিনি জানান, এই আদর্শ রক্ষার
তাগিদেই ভোটে লড়া। আর সাধারণ মানুষের স্বার্থে এসইউসিআই সি সারাবছর লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যায়। স্থানীয় স্তরে সারের কালোবাজারি, র্যাশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শালকুমার হাট পলাশবাড়ীর মতো এলাকায় প্রতিবাদী আন্দোলন একমাত্র করে এসইউসিআই(সি)। কিন্তু এসব সত্ত্বেও অধিকাংশ জনগনের রায় এসইউসিআই(সি)-র বিরুদ্ধে। তাই এক্ষেত্রে জনগনকে বোঝাতে যে তাঁরা কিছুটা হলেও ব্যর্থ তা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন রবিচন রাভা।