- মণিজিঞ্জির সান্যাল
বেশ কিছু ইউটিউবারকে দেখতে পাচ্ছি দিনের পর দিন অসৎ উপায় অবলম্বন করে অর্থ রোজগারের খেলায় মেতে। ভিউজ আর সাবস্ক্রাইবের নেশায় মত্ত একশ্রেণির মানুষ দিন-রাত ইচ্ছেমতো ভিডিও তৈরিতে মত্ত। সেসব ভিডিও যদি গঠনমূলক হয়, তাহলে তো সেই নিয়ে বিরূপ আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সমাজকে একেবারে বিনষ্ট করার জন্য যেসব রিলস বা ভিডিও বা প্রতিদিনের জীবনযাপনকে তাঁরা তুলে ধরছেন, সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন বলে কোনও কিছুই অবশিষ্ট থাকছে না।
কিছু ইউটিউবারের মধ্যে চলছে শুধুই নোংরা খেলার প্রতিযোগিতা। পারিবারিক অভিনয়, চূড়ান্ত নাটকের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা উপার্জন, অশ্লীলতা, এছাড়াও আরও কত কী। সহজ উপায়ে অর্থ রোজগারের এই পথ একটা সমাজকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। এই শ্রেণির ইউটিউবারদের মাধ্যমে ভালো কোনও বার্তা নেই। তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ সমাজের কাছে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।
তবে আলাদা একশ্রেণির ইউটিউবার আছেন, যাঁরা তাদের কাজের মাধ্যমে অনেক অনেক অচেনা, অজানা তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরেন। তাঁদের প্রতি এবং তাঁদের কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেই হয়।
পাশাপাশি অদ্ভুত কিছু ইউটিউবার আছেন, যাঁরা দোকান, বাজার, রাস্তাঘাট কোনও পাবলিক প্লেসকেই রেহাই দিচ্ছেন না। যেখানে-সেখানে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় কথা বলছেন, নাচছেন। কেউ কেউ আবার ডেইলি ভ্লগের নামে দেখিয়ে যাচ্ছেন দাঁত পরিষ্কার থেকে স্নান করা, খাওয়া, ঘুমানো, রাগ, অভিমান, ঝগড়া, মারপিট। নিজেরা মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করে মানুষের থেকে সহানুভূতি আদায় করছেন। যার যত ভিউজ, তার তত টাকা। এভাবে চলছে টাকা তোলার প্রতিযোগিতা। এককথায় তাঁদের জীবনটা জুয়া খেলায় পরিণত হয়েছে। সেই খেলায় অংশীদার হচ্ছে পরিবারের ছোট থেকে বড় প্রত্যেকেই।
তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের নাটক দেখে সমাজের মানুষের লাভটা ঠিক কী? নোংরা উপায়ে অর্থ উপার্জনের এই পথ আর কতদিন? ছোট থেকে বড় প্রত্যেকেরই হাতে এখন একটা করে স্মার্টফোন। হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, দেখছেন কেন?
অবুঝ মানুষ কী বোঝে এর অর্থ? একটি নাবালক ছেলেমেয়ের কাছে এই প্রশ্নের ঠিক কী উত্তর দেবেন? তারা তো দেখেই শিখবে, তাই না? কিন্তু পারিবারিক বা সামাজিক শিক্ষা? বড়দের দেখেই ছোটরা শেখে। কিন্তু হাতের ওই ফোন? কী শিক্ষা দেবে একটা শিশুকে, যেখানে পরিবারের প্রত্যেক বড় সদস্য সর্বক্ষণ হাতে একটা ফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? অসভ্য নোংরা আচরণ আর প্রতি মুহূর্তে মিথ্যাকে আশ্রয়।
বিয়েবাড়িতে কীভাবে সেজে যাচ্ছেন তা দেখে মানুষের কিচ্ছু এসে যায় না। ছোট্ট সন্তানকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে দিনের পর দিন টাকা রোজগার করছেন, কেন? ক্যামেরা অন হতেই চোখে গ্লিসারিন মেখে অসম্ভব কায়দায় অর্থ ভিক্ষে করছেন। কিছু পুরুষ আর নারী বিভিন্ন উপায়ে অঙ্গভঙ্গি করছেন। কিছু নারী সকাল থেকে নাটক করে সংসারের কাজ দেখাচ্ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বোধহয় সময় এসেছে সীমাবদ্ধতা নীতি প্রয়োগ করার।
(লেখক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। সাহিত্যিক)